রাজধানীতে ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল স্থগিত করা ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে।
কর্মসূচির প্রথম দিন শনিবার রাজধানীতে ককটেল বিস্ফোরণ, আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ, ভাঙচুর ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে সহিংসতা রোধে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
সকাল থেকেই রাজধানীর অভ্যন্তরীণ রুটে যানবাহন চলাচল করছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গণপরিবহনের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়নি। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
কাজের তাগিদে জনসাধারণ ঘরের বাইরে বের হলেও তাদের মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাদের চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। গণপরিবহনে উঠার পর আতঙ্ক তাদের তাড়া করে ফিরছে। বিশেষ করে শাহবাগে বিহঙ্গ পরিবহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ঘটনার পর থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে এই আতঙ্ক কাজ করছে।
এদিকে শনিবার ভোরে ঢাকার আগারগাঁওয়ে জেলা নির্বাচন অফিসে ককটেল ও পাথর নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা।
এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন অফিসার শাহ আলম বলেন, এ ঘটনায় কার্যালয়ের জানালার গ্লাস ভেঙে গেছে।
পুরান ঢাকার বাবুবাজারে সকাল পৌনে ৯টার দিকে পুলিশ-শিবিরের সংঘর্ষে ৪ পুলিশ সদস্যসহ ৫জন আহত হয়েছে। আহতরা হলেন- এসআই মানবেন্দ্র বালা, এএসআই নিজামুল, এএসআই রফিক, কনেস্টেবল সমির ও শিবিরকর্মী আব্দুল ওয়াদুদ। এ সময় পুলিশ দুই শিবিরকর্মীকে আটক করে। এরা হলেন- ওয়াদুদ ও ফারুক।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম জানান, ৯টার দিকে শিবিরকর্মীরা বাবুবাজার এলাকায় অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ করে ও গুলি ছুড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়ে।
সকাল সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংকের বিপরীত দিকে ৪টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।
শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন জানান, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
এ ছাড়া খামারবাড়ি খেজুর বাগানের সামনে ৩টি ও মাদারটেক এলাকায় ৩টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর মগবাজার রেলগেইট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে জামায়াতে ইসলামী। এ সময় জামায়াতকর্মীরা রাস্তায় আগুন দিয়ে অবরোধের চেষ্টা করে।
এ ছাড়া ভোর থেকে মগবাজার রেলগেইট, মালিবাগ এলাকায় পিকেটিং ও রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে জামায়াতকর্মীরা।
শাহজাহানপুর থানায় কর্তব্যরত অফিসার এস আই সাঈদ চৌধুরী জানান, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মালিবাগ পাবনা কলোনির সামনে পিকেটাররা জড়ো হলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে লালবাগ থানার আজিমপুর ছাপড়া মসজিদের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের সময় শামীম নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
লালবাগ থানার ওসি নূরুল মুস্তাকিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ককটেল বিস্ফোরণের সময় শামীমকে হাতেনাতে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে একটি মিছিল বের করে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় অবরোধ সমর্থকরা।
নিউমার্কেট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) লুৎফর কবীর জানান, তার কাছে এ ধরনের কোনো খবর আসেনি।
এর আগে বংশালে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
গাবতলী কবিরাজ বাড়ি এলাকা থেকে মো. রাসেল হোসেন (২৪) নামে এক যুবককে আটক করেছে দারুস সালাম থানা পুলিশ। সকাল পৌনে ৮টার দিকে ৪টি ককটেলসহ তাকে আটক করা হয়।
আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে দারুসালাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, নাশকতার উদ্দেশ্যে এই ককটেলগুলো নিয়ে যাচ্ছিল ওই যুবক।
ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া ১৮ দলের ডাকা তৃতীয় দফার এই অবরোধ শেষ হবে মঙ্গলবার ভোর ৬টায়।
এর আগে ২৬ নভেম্বর থেকে দুই দফায় মোট ৯ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করে এ জোট। এ সময় সহিংসতায় অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এদের মধ্যে অনেকেই সাধারণ মানুষ রয়েছেন।
(দ্য রিপোর্ট/এইচএ/এফএস/এনইউডি/কেএ/এসবি/এস/এইচএসএম/ডিসেম্বর ০৭, ২০১৩)