ডব্লিউটিও’র বালি সম্মেলন
৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা
রাজু আহমেদ, বালি (ইন্দোনেশিয়া) থেকে : আগামী দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা কার্যকরে রাজি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ উন্নত দেশগুলো।
পণ্যের মান ও উৎস সম্পর্কে প্রতিটি দেশ আলাদাভাবে শর্ত দিতে পারবে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা বা ডব্লিউটিও’র বালি ঘোষণায় স্বল্পোন্নত দেশের জন্য বাণিজ্য সুবিধা বাড়ানোর অঙ্গীকার করা হয়। রাতভর নানা নাটকীয়তার পর শনিবার দুপুরে ১৬০ সদস্য দেশের সমঝোতার মধ্য দিয়ে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে নবম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে এ ঘোষণা গৃহীত হয়।
খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধে শুরু থেকেই বালি সম্মেলনের সাফল্য নিয়ে তৈরি হয়েছিল অনিশ্চয়তা। আলোচনার জন্য চার বছর সময় দিয়ে এই দুই দেশকে সমঝোতায় আনা গেলেও, আপত্তি তোলে কিউবা, ভেনিজুয়েলা, বলিভিয়া ও নিকারাগুয়া। বাণিজ্য অবরোধের মতো বৈষম্য কাটাতে বালি ঘোষণায় সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দাবি করে তারা। বিরোধ মীমাংসায় শুক্রবার রাতভর চলে আলোচনা। ঘুমকাতুরে প্রতীক্ষার পর শনিবার সকালে আসে চূড়ান্ত ঘোষণা।
সব পক্ষের ঐতিহাসিক এই সমঝোতায় বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা অস্তিত্ব সঙ্কট কাটালো বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিনিধিরা।
বালি ঘোষণায় সব পক্ষই কিছু না কিছু পেয়েছে বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা। অবশ্য বালি ঘোষণা থেকে সরাসরি বড় কোনো অর্জন নেই বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর। ২০০৫ সালে হংকং-এ দেয়া অঙ্গীকার মেনে ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা কার্যকরে রাজি হয়েছে ধনী দেশগুলো। এরই মধ্যে এই সুবিধা কার্যকর করা দেশগুলো বাড়াতে পারবে পণ্যের আওতা। তবে মান ও উৎস নির্ধারণের ক্ষমতা আমদানিকারক দেশের হাতে থাকায় এখান থেকে কতটুকু সুবিধা পাওয়া যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।
এর আগে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে শেষ হতে পারেনি বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা বা ডব্লিউটিও’র নবম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন। বালির নুসা দুয়া কনভেনশন সেন্টারে শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় সমাপনী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সমঝোতা না হওয়ায় দুপুরে ওই অনুষ্ঠানের সময় অনির্দিষ্ট করা হয়। গভীর রাতে সম্মেলন শেষ হতে পারে বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন ডব্লিউটিও’র মুখপাত্র কিথ রকওয়েল।
তবে নিজেদের অবস্থান থেকে এখনো কোনো পক্ষই ছাড় দিতে রাজি না হওয়ায় সিদ্ধান্ত ছাড়াই সম্মেলন শেষ হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বালি সময় রাত পৌনে একটা) বিরোধী পক্ষগুলোকে একটি সিদ্ধান্তে আনার চেষ্টা করছেন ডব্লিউটিও মহাপরিচালক।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বালি ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হওয়ার কথা মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন। তবে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য বিতরণকে কৃষি চুক্তির আওতায় আনার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অনঢ় অবস্থান এবং এই ইস্যুতে ভারতের ভিন্নমত পুরো সম্মেলনকে স্থবির করে রেখেছে। ফলে গভীর রাত পর্যন্ত আলোচনা চলতে পারে বলে ধারণা করছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা।
সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউটিও মুখপাত্র কিথ রকওয়েল বলেন, ‘বালি প্যাকেজ নিয়ে সব পক্ষ অনেকটা কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। তবে একটি সমঝোতায় পৌঁছতে আরো কয়েক ঘণ্টা সময় দিতে হবে।’
তিনি জানান, ‘খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুতে মূল দুই বিরোধী পক্ষ ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন। এই ইস্যুতে মীমাংসা হলেই বালি সম্মেলন সাফল্যের সঙ্গে শেষ হতে পারে।’
তবে আগের দিনই ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী আনন্দ শর্মা জানিয়ে দিয়েছেন, ‘দর কষাকষি প্রক্রিয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুতে কোনো ছাড় দেবে না তার দেশ।
তিনি বলেন, ‘১২০ কোটি মানুষের দেশ ভারত ৭০ কোটি দরিদ্র মানুষকে তাদের ন্যূনতম খাদ্য চাহিদা পূরণে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এটি নাগরিকদের আইনসঙ্গত অধিকার। এই ইস্যুতে কোনো আপসের সুযোগ নেই।’
(দ্য রিপোর্ট/আরএ/নূরু/ এমডি/ডিসেম্বর ০৭, ২০১৩)