ফারুক নয়; মিনহাজুল প্রধান নির্বাচক
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : প্রধান নির্বাচক পদে জোরেশোরেই ফারুক আহমেদের নাম শোনা গেলেও শেষ মুহূর্তে এগিয়ে মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। তিনি নির্বাচক কমিটির সদস্যও। বিসিবির অনেক পরিচালক ফারুকের পাশে দাঁড়ালেও ‘রাজনৈতিক’ লেবাসের কারণে তার নাম কাটা পড়তে পারে। যদিও মিনহাজুল আবেদীনের ‘ওই’ পরিচয়টা নিষ্কন্টন নয়!
ফারুকের রয়েছে ২০০৩-২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রধান নির্বাচকে থাকাকালে দলের সাফল্য। আর নান্নুর রয়েছে বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ার। সঙ্গে নির্বাচক কমিটিতে থাকার সুবিধা। নান্নু দলের হয়ে অনেক ম্যাচ খেলেছেন; দেখিয়েছেন নৈপুন্য। দলের জয়ের ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। ফারুক সেই বিবেচনায় বেশ পেছনে।ক্রিকেট ক্যারিয়ারের মতো প্রধান নির্বাচক পদে ফারুকের চেয়ে নান্নুই এগিয়ে।
প্রধান নির্বাচক নির্বাচনে বিসিবি সরাসরি ২ পক্ষে বিভক্ত। এক পক্ষ ফারুককে প্রধান নির্বাচক দেখতে চায়। অন্যপক্ষের পছন্দ নান্নু। নান্নু অনেক দিন ধরে নির্বাচক কমিটিতে; দলও ভালো করেছে। তার দল সম্পর্কে সব জানা। অন্যদিকে ফারুক ক্রিকেটের সঙ্গে নেই প্রায় ৬ বছর।
বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে অনেক পরিচালকই ফারুকের পক্ষে বলেছেন। কিন্তু ফারুক প্রধান নির্বাচক হলে নান্নু তা নেবেন না বলে বিভিন্ন সূত্রের আভাষ। এমনকি তিনি (নান্নু) সে ক্ষেত্রে বিসিবিকে ‘গুডবাই’ জানানোর কথাও বলেছেন। বিবিসির সভাপতিও বিষয়টি ভালোভাবেই অবগত রয়েছেন। ফলে তিনি ফারুক প্রধান নির্বাচক করে ঝামেলার তৈরি করতে চাইবেন না। এ ক্ষেত্রে বিবিসির একাধিক পরিচালক বেকে বসতে পারেন; থাকছে সেই গুঞ্জণও। প্রধান নির্বাচক নির্বাচনে সভাপতি সর্তক থেকেই পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। যতদূর জানা গেছে, নান্নুর দিকেই পাল্লা ভারি হচ্ছে প্রধান নির্বাচকের পদ।
আকরাম খান এ পদ থেকে সরে যাওয়ার পর ওই পদ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা হয়নি। সর্বশেষ বিসিবির সভাতেও আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বিসিবির সভাপতি বলেছেন, ‘পরবর্তী বোর্ড সভায় প্রধান নির্বাচক কে হচ্ছেন, সেই ঘোষণা আসবে।’
ফারুক এখন পর্যন্ত দলের হয়ে ৭ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। রান করেছেন ১০৫। সেখানে নান্নু দলের হয়ে ২৭ ওয়ানডে ম্যাচ ব্যাট হাতে ৪৫৩ রানের সঙ্গে নিয়েছেন ১৩ উইকেট। ২ জনের ক্রিকেট ক্যারিয়ার ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের পর শেষ হয়ে যায়।
১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম অংশ নেওয়া বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে নান্নুই সবচেয়ে বেশি ১৪০ রান করেছেন। এর মধ্যে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ৬৮ রানের একটি ইনিংসও রয়েছে তার। আর প্রথম কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশ পাকিস্তানকে হারানো ম্যাচেও ছিলেন নান্নু। বিশ্বকাপের সেই ম্যাচে তার অবদান ৭ ওভারে ২৯ রান দিয়ে ১ উইকেট। ওই বিশ্বকাপে উইকেটও নিয়েছেন মোট ৪টি। সেই তুলনায় ফারুক একেবারে নীরব ছিলেন। ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। রান করেছেন ১৬।
বোর্ডের এক পক্ষ যে ২০০৩-২০০৭ সাল পর্যন্ত ফারুক প্রধান নির্বাচক থাকার সময় বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয় (জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে), প্রথম কোনো দলকে (কেনিয়া) হোয়াইটওয়াশ করা, জিম্বাবুইয়েকে টানা হারানো, ভারতকে হারিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে টোয়েন্টি২০ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা, বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে হারানো, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কাকে হারানোর স্মৃতি সামনে তুলে ধরেছে। বিপরীত পক্ষ আবার ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচক কমিটিতে নান্নুর থাকার বিষয়কে প্রাধান্য দিচ্ছে।
নান্নু নির্বাচক কমিটিতে থাকার সময় বাংলাদেশ দল শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দাপটে খেলে টেস্ট ড্র করেছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে হোয়াইটওয়াশ করেছে, সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ভারত, শ্রীলঙ্কার মতো দলকে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলেছে, এ বিষয়গুলো সামনে তুলে ধরছে। দলকে কিভাবে সাজানো উচিত, কী পরিকল্পনা নেওয়া উচিত, কিভাবে এগিয়ে গেলে দল আরও ভালো করবে; এ মুহূর্তে নান্নুই সবচেয়ে ভালো বুঝবেন বলেই নান্নু পক্ষের মত। এ সবদিক বিবেচনায় এখন নান্নুর দিকেই পাল্লা ভারি।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান গত ২৭ নবেম্বর বিসিবির জরুরি সভার পর কয়েকটি নাম উচ্চারণ করেছেন। সেখানে ফারুকও আছেন। আবার আছেন নান্নুও। বলেছেন, ‘প্রধান নির্বাচক হিসেবে কয়েকটা নাম এসেছে। দুয়েকটা নাম এসেছে জোরেশোরে। সবচেয়ে বেশি জায়গা থেকে এসেছে ফারুকের নাম। নান্নুর নামও এসেছে। পাইলটের নামও এসেছে আলোচনায়। আমাদের সুমনের কথাও এসেছে। আজকালের মধ্যে ঘোষণা করে দেব।’ সেই সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। হবে পরবর্তী বোর্ড সভায়।
বিসিবির পরিচালক, ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান নির্বাচক আকরাম খান বলেন, ‘আসলে এ বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হয়নি। হয়ে যাবে দ্রুতই। এ সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড। সবাই বসেই আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ নির্বাচক কমিটির সদস্য হাবিবুল বাশার বলেছেন, ‘যেই আসুক, আমার কাজ করতে কোনো সমস্যা হবে না।’
(দ্য রিপোর্ট/এমএ/এএস/এস/সিজি/ডিসেম্বর ৭, ২০১৩)