কাজী জামশেদ নাজিম, দ্য রিপোর্ট : নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কা থাকায় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরাপত্তা পরিকল্পনার ছক তৈরি করছে পুলিশ। এরই অংশ হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্র চিহ্নিত, ভোটার সংখ্যা, ভোটকেন্দ্রের আশপাশের এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তির নামসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করার কথা বলা হয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা অবাধে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারবে না বলে আশঙ্কা আছে। এই তথ্যের আলোকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে নিরাপত্তা পরিকল্পনার ছক তৈরি করা হচ্ছে।

সূত্র জনায়, যেসব স্থানে নাশকতার চেষ্টা চালানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হবে সেখানেই আইন প্রয়োগের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাচনকালীন মনিটরিং সেলকে ছক এঁকে নিরাপত্তার সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করারও নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নিরাপত্তার বিষয়কে সামনে রেখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন। নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। এরই আলোকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেশ কিছু বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে পুলিশ সদর দফতরের পক্ষ থেকে। নির্দেশনার বিষয় ছিল- ‘১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০১৪ উপলক্ষে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা প্রসঙ্গ’।

ডিএমপি সূত্র জানায়, সদর দফতরের এমন সিদ্ধান্তের পর ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এলাকার ভোটকেন্দ্র সম্পর্কে তথ্য ইতোমধ্যে সংগ্রহ করার কাজ শুরু হয়েছে। গত ২ ডিসেম্বর ডিএমপির সদর দফতর থেকে ঢাকা মহানগর এলাকার রমনা, লালবাগ, ওয়ারী, মতিঝিল, তেজগাঁও, মিরপুর, গুলশান ও উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুসারে- ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা বিধান ও সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য ‘ছক’ মোতাবেক ভোট কেন্দ্র এবং ভোটার সংখ্যা সংক্রান্ত তথ্যাদি ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে হার্ড কপি ও সফট কপি (সিডি আকারে) প্রদান করার কথা বলা হয়েছে।

ডিএমপির নির্দেশনা স্মারকের (ডিএমপি (স:দ:)/নির্বাচন-২০১৪/ পিএটুজেসি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন)/ ৯৯ (৮) চাওয়া তথ্য অনুসারে, নিরাপত্তার পরিকল্পনার ছকের মধ্যে ভোটকেন্দ্রে সম্ভাব্য টিএন্ডটি টেলিফোন বা মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া যেসব ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে সেসব কেন্দ্রকে তারকা চিহ্নিত করে বিশেষ নিরাপত্তার কথাও বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে প্রতিটি কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা, একই এলাকায় ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা এবং ভোট গ্রহণ স্থানের যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়াদি চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছে।

স্থানীয় আধিপত্যকারীরা যেন আধিপত্য এবং কোনো ধরনের নাশকতা করতে না পারে সে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে বিরাজমান বিরূপ সম্পর্কের কারণে যেসব স্থানে নাশকতা হতে পারে সেসব কেন্দ্রকে চিহ্নিত করার কথাও বলা হয়েছে। প্রার্থীর নিজ এলাকায় প্রভাব কেমন সে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।

নিরাপত্তা বিষয়ের উল্লেখিত বিষয় বিবেচনায় নিয়ে, প্রতিটি ভোট কেন্দ্র এলাকায় টহল দল সার্বক্ষণিক টহল দিবে। টহল ছাড়া তাদের নির্ধারিত জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চেকপোস্ট তালিকা অনুযায়ী স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও সকল সশস্ত্র ও নিরস্ত্র পরিদর্শক, এসআই, সার্জেন্ট, আর্মড এসআই, টিএসআই, সসস্ত্র ও নিরস্ত্র এএসআই, এটিএসআই, নায়েক ও কনস্টেবলদের ইউনিট উল্লেখ করে একটি পুর্ণাঙ্গ তালিকা প্রদান করতে হবে। তালিকায় পিওএম এবং এসএএফে- কর্মরত অফিসার ও ফোর্সসদর প্লাটুন বা কোম্পানির নাম দিতেও বলা হয়েছে।

ডিএমপির নিরাপত্তা সম্পর্কে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার দ্য রিপোর্টকে বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিরাপত্তার পরিকল্পনার একটি ছক চাওয়া হয়েছে। তেজগাঁও বিভাগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে ডিএমপির ছক আকারে চাওয়া তথ্যগুলো দেয়া হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/কেজেএন/ এমডি/ ডিসেম্বর ০৭, ২০১৩)