অভিমানে যাচ্ছেন রংপুর
প্রচণ্ড চাপে অনড় এরশাদ, দ্বিমুখী মন্ত্রীরা
সাগর আনোয়ার, দ্য রিপোর্ট : সব দল অংশ না নিলে এখনও নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে অনড় এরশাদ। তবে দ্বিমুখী আচরণ করছেন জাপার মন্ত্রীরা। তারা এরশাদের কাছে একদিকে পদত্যাগপত্র দিচ্ছেন অন্যদিকে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বারিধারায় জাপার একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম মহাসচিব ও ছাত্র সমাজের সাবেক এক সভাপতির সঙ্গে কথা বলে শনিবার এ সব কথা জানা গেছে।
আর নির্দেশ দেওয়ার পরও জাপার মন্ত্রীরা পদত্যাগ না করে সরকারের সঙ্গে বার বার দেন-দরবার চালিয়ে যাওয়ায় অভিমানে ঢাকা ছেড়ে নিজ জন্মস্থান রংপুরে চলে যেতে চাইছেন এরশাদ। ইতোমধ্যে বিমানের টিকিটও কাটা হয়ে গেছে। এরশাদের রবিবার দুপুরে রংপুর যাওয়ার টিকিট কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক।
জাপা মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার শুক্রবার সন্ধ্যায় এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমরা শনিবার পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেব। আমাদের চারজন মন্ত্রীর পদত্যাগপত্র জমা আছে। বাকিরাও জমা দেবেন।’
এরশাদের সঙ্গে শনিবার বিকেল ৩টা ১২ মিনিটে সাক্ষাতের প্রাক্কালে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘আজ ছুটির দিন। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে নেই। দেশে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এসেছেন। আমরা রবিবার সময় চাইব। সময় পেলে পদত্যাগপত্র জমা দেব।’
এ সময় রুহুল আমিন হাওলাদারের সঙ্গে থাকা এরশাদের ছোটভাই জিএম কাদের বলেন, ‘আমাদের পদত্যাগপত্র পার্টির চেয়ারম্যানের কাছে জমা আছে। উনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই হবে।’
জাপা সূত্রে জানা গেছে, এরশাদের কাছে পদত্যাগপত্র জমা রয়েছে জাপা নেতারা বার বার এমন দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে একজনও এরশাদের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেননি। এমনকি এরশাদের ছোটভাই নির্বাচনকালীন সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের ও স্ত্রী রওশন এরশাদও পদত্যাগে আগ্রহী নন। তারাই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এরশাদকে নির্বাচনে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন। আর এক্ষেত্রে মহাসচিব দুই কূল রক্ষা করে চলছেন।
জাপা সূত্র মতে, এরশাদকে নির্বাচনে রাজি করাতে জাতীয় পার্টির মন্ত্রীরা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। গুলশান-২ এর ১২১/ডি হাওলাদার কমপ্লেক্সে শনিবার দুপুর দেড়টায় বৈঠক করেন জিএম কাদের- রুহুল আমিন হাওলাদার। বৈঠক শেষ হয় দুইটা চল্লিশ মিনিটে। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন জিএম কাদের। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জিএম কাদেরকে স্পষ্টভাবে ৬০টির বেশি আসনের দাবি নাকচ করে দেন। এমনকি এরশাদ না আসলেও ঘোষিত তারিখেই নির্বাচন হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন।
প্রধানমন্ত্রীর এমন মনোভাবের পরই জিএম কাদের-হাওলাদার এবং প্রায় একই সময়ে রওশন এরশাদের বাসায় বৈঠক করেন পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমিন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন বাবলু। তারাও এরশাদকে অনড় অবস্থান থেকে সরানোর জন্য কর্মকৌশল নির্ধারণ করেন ।
বৈঠক শেষে শনিবার বিকেল ৩টা ১২ মিনিটে এরশাদের বাসভবনে প্রবেশ করেন রুহুল আমিন হাওলাদার, জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নু। তারা প্রায় চার ঘণ্টা বৈঠক করেন এরশাদের সঙ্গে। কিন্তু এরশাদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে অনড় থাকায় বৈঠক থেকে শুরুতে বেরিয়ে যান জিএম কাদের। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি কিছুই বলেননি। সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে বের হন জাপা মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার। তিনিও সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান। এরপর ৭টা ২০ মিনিটে এরশাদের বাসার পেছনের গেট দিয়ে বের হন সরকারি সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
এরশাদের সঙ্গে জাপার তিন মন্ত্রী ও সরকারি একটি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বৈঠকের বিষয়ে বারিধারায় সার্বক্ষণিক থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘শীর্ষ নেতাদের নাটকীয় ভূমিকার কারণে এরশাদের মনে অনাস্থা ও অবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে। তারা পদত্যাগের বদলে বার বার স্যারকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। স্যার এজন্য প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ।’
জানা গেছে, শনিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জিএম কাদেরের বৈঠকের সংবাদ পেয়েই এরশাদ নিচে নেমে সাংবাদিকদের বলেন,‘আই এম দ্য ফাইনাল অথরিটি অব দিস পার্টি। মন্ত্রিসভা থেকে কেউ পদত্যাগ না করলেও আমি নির্বাচনে যাব না। এটাই আমার শেষ কথা।’
জাপার একজন প্রতিমন্ত্রী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দুই তৃতীয়াংশ আসন রেখে বাকি আসন জাপা ও অন্যান্য দলগুলোকে দিতে চাচ্ছেন। শুরুতে এরশাদের দাবির প্রতি প্রধানমন্ত্রী কিছুটা নমনীয় থাকলেও হঠাৎ করে এখন অনমনীয় হয়ে গেছেন। ফলে কী করি আমরাও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি।’
মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ ও সরকারের সঙ্গে দেন-দরবারের বিষয়ে জাপা মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমরাতো পদত্যাগে রাজি আছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সময় হচ্ছে না। আজকে উনি কার্যালয়ে আসেননি। আমরা সৌজন্যতাবোধের মাধ্যমে বর্তমান সঙ্কট উত্তরণের চেষ্টা করছি।’
জাপা সূত্রে জানা গেছে, এরশাদ নির্বাচনে না এলেও বিকল্প হিসেবে ব্যারিস্টার আনিস ও জিয়াউদ্দিন বাবলুর নেতৃত্বে বিকল্প জাতীয় পার্টিকে লাঙ্গল প্রতীক দিয়ে নির্বাচনে নেওয়ার গোপন প্রস্তুতি রয়েছে। এটি বুঝতে পেরেই রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছেন।
(দ্য রিপোর্ট/ সাআ/এনডিএস/এস/এইচএসএম/ডিসেম্বর ০৭, ২০১৩)