দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে কৃষি ও শিল্পে স্বাবলম্বী হওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ কমপ্লেক্স উদ্বোধন শেষে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা কারো কাছে মাথা পাততে চাই না। মাথা তুলে চলতে চাই। এটা তখনই সম্ভব যখন আমরা কৃষি ও শিল্পে স্বাবলম্বী হবো।

তিনি বলেন, সময়োপযোগী ও লাগসই কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে সেগুলো কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। কৃষক যাতে সময়মত কৃষি উপকরণ এবং উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।

স্কুল শিক্ষার্থীদের কৃষিকাজের প্রতি আগ্রহী করে গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন কৃষকের ছেলে লেখপড়া শিখে আর মাঠে নামতে চায় না। একবার ফুলপ্যান্ট পরে তারপর লুঙ্গি পরে মাঠে নামতে চায় না তারা।

কৃষিবিদদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা একেক এলাকায় গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে মাঠে নামতে পারেন। কোনো কাজই ছোট না। কৃষক খাদ্য উৎপাদন না করলে তো খাদ্য পাবো না। আমাদের তো কৃষকদের সালাম জানানো উচিত।

কৃষকদের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু ভূমি সংস্কারে হাত দেন। তিনি ১০০ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিকানার সিলিং নির্ধারণ করেছিলেন। ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেছিলেন। কৃষি শিক্ষায় মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের আকর্ষণ বাড়াতে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দিয়েছিলেন।

‘কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন জাতির পিতা। তিনি উদ্যান উন্নয়ন বোর্ড, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন,’ জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা কৃষি বিজ্ঞানীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনারা এ যাবৎ বিভিন্ন ফসলের চারশোরও বেশি উন্নত এবং খরা, লবণাক্ততা ও জলমগ্নতাসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন করেছেন। উদ্ভাবন করেছেন লাগসই প্রযুক্তি, কৃষি যন্ত্রপাতি এবং চাষাবাদের কলাকৌশল। আপনাদের উদ্ভাবন, সরকারের সহায়তা এবং কৃষকের পরিশ্রমের ফলেই আজ দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছে। এ কৃতিত্ব শুধু সরকারের একার নয়, আপনাদের এবং এ দেশের কৃষক সমাজের। কৃষিবিজ্ঞানীদের চাকরির বয়স বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে, জানান তিনি।

বিগত সাড়ে চার বছরে কৃষিতে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণ করা হয়। বর্গাচাষীদের মধ্যে নামমাত্র সুদে কৃষি ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। তাদের জন্য মাত্র দশ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের ১৭ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে তিন মাসের খাদ্য কিনতে ছয় বিলিয়ন ডলার দরকার।

১৯৯৭ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নামমাত্র মূল্যে খামার বাড়ির পাশে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনকে এক একর আয়তনের জমি বরাদ্দ দেয়। এবার ক্ষমতায় এসে সেখানে ভবন নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়। ২০১২ সালের মার্চে শেখ হাসিনা এই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনের সভাপতি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব মোবারক আলী।


প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থল থেকেইশেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কৃষকরত্ন শেখ হাসিনা হল’ এবং ‘নবাব সিরাজুদ্দৌলা হল’ উদ্বোধন করেন।

(দিরিপোর্ট২৪/ওএস/এমএআর/ এমডি/অক্টোবর ২৩, ২০১৩)