এ কেমন শিক্ষা!
কক্সবাজার সংবাদদাতা : বেঞ্চ নেই, মাটিতে বসে গাদাগাদি করে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে শিশুদের। বিদ্যালয় ভবনে একই সঙ্গে চলছে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কার্যক্রম।
কক্সবাজার জেলার দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর শিশু শিক্ষার্থীরা এমনই নির্মমভাবে শিক্ষা নিচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হোয়ানক ইউনিয়নের কার্যক্রম চলছে টাইমবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চলছে সুতরিয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কালামারছড়া ইউনিয়নের কার্যক্রম চলছে চিকনিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
টাইমবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ৪৫ জন। এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুলতান আহমদ জানান, ‘২০১০ সালের এপ্রিল মাসে বিদ্যালয় ভবনে ইউপির কার্যক্রম শুরু হয়। এতে শ্রেণী কক্ষের চরম সংকট হয়। বর্তমানে শিশু শ্রেণী ও প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে ভবনের নিচে খোলা জায়গায় মাটিতে পাটি বিছিয়ে। মাঝেমধ্যে ভবনের অপ্রশস্থ বারান্দায় মেঝেতে গাদাগাদি করে পাঠদান করা হয়।’
সুতরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদুল হক জানান, তার বিদ্যালয়ে শ্রেণীকক্ষের সংকট ভয়াবহ। ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে বিদ্যালয় ভবনে শুরু হয় ধলঘাটা ইউপির কার্যক্রম। আগে শিক্ষার্থীদের ভবনের নিচে খোলা জায়গায় পাঠদান হতো। সে জায়গাতেও এখন মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। বর্তমানে ভবনের দুই ফিট প্রশস্থ বারান্দার মেঝেতে শিশুশ্রেণীর পাঠদান চলছে।
তিনি বলেন, এটি সত্যিই অমানবিক। তারপরেও আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।’
চিকনিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লকিয়ত উল্লাহ জানান, তাদের পুরাতন বিদ্যালয় ভবনে ২০১১ সাল থেকে চলছে ইউপি কার্যক্রম। তার মতে, বিদ্যালয়ে বর্তমানে শ্রেণীকক্ষের সমস্যা প্রকট না হলেও ইউপির কার্যক্রম চলায় সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যালয় ভবনে ইউপির কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে হোয়ানক ইউপির চেয়ারম্যান এনামুল করিম চৌধুরী জানান, জমি নিয়ে জটিলতার কারণে নতুন ইউপি ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছে না। তাই আপাতত বিদ্যালয় ভবনে ইউপির কার্যক্রম চলছে। তবে তিনি বিদ্যালয় ভবন দখলের বিষয় অস্বীকার করেন।
ধলঘাটা ইউপির চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ বাচ্চু বলেন, নতুন ভবনের কাজ চলছে। এক বছরের মধ্যে বিদ্যালয় ভবন ছেড়ে দেওয়া হবে।
কালামারছড়ার চেয়ারম্যান মীর কাসেম চৌধুরী বলেন, ইউপির নিজস্ব কোনো জায়গা নেই, ভবনও নেই। তাই বিদ্যালয় ভবনে অফিস স্থাপন ছাড়া বিকল্প ছিল না।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, বিদ্যালয় ভবনে ইউপির অফিস স্থাপনের ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাহত হচ্ছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ইউএনও মোহাম্মদ আনোয়ারুল নাসের বলেন, বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় আপাতত বিদ্যালয় ভবনে তিনটি ইউপির কার্যক্রম চলছে। এ কারণে নিয়মিত পাঠদান কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। ইউপি ভবন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক উদ্যোগ নিতে চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এইচএস/এমএআর/ডিসেম্বর ০৮, ২০১৩)