প্রসঙ্গ : নির্বাচন কমিশন ও বিধিভঙ্গ
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ। যারা নিয়োগ দিয়েছেন সেই সরকার বাদে সব রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ গালমন্দ করতে ছাড়ছেন না তাদের। এমনকি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কমতি ছিলো না সেই পূর্বসূরিরা পর্যন্ত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বিএনপি-তো নির্বাচন কমিশনের মাঁজা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।
এই সব অভিযোগের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে কমিশন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করায় আপাততঃ তাদের কোনো চাপ কমিশনের ঘাড়ে নেই। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন যদি একতরফা হয়, সেক্ষেত্রে বর্তমান কমিশনের যোগ্যতা-অযোগ্যতার পরীক্ষা দেবার তেমন কোনো সুযোগ থাকবে না। আর যদি সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়, তাহলে তা এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই হবে এমন কোনো নিশ্চয়তাও নেই।
তাই নির্বাচন কমিশনের উপর বড় কোনো আগাম অভিযোগ আনার পক্ষে আমরা নই। তবে, প্রার্থীদের নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের ব্যাপারে আমাদেরসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় যেসব খবর এসেছে, নির্বাচন কমিশন সে বিষয়ে যদি উদাসীনতার পরিচয় দেয়, তাহলে শেষতক তা তাদের যোগ্যতা, নিরপেক্ষতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
খবরে যতদূর বলা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, অনেক প্রার্থীই কমিশন প্রণীত আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। এক তরফা নির্বাচন হলেও এ কমিশন এ বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যেতে পারে না। আমরা মনে করি, ছোট ছোট কাজের মধ্যদিয়ে হলেও কমিশনের যোগ্যতা এবং সদিচ্ছার পরীক্ষা দেওয়া উচিত। তবে আমরা এটাও মনে করি যে, নির্বাচনী লড়াইয়ে ময়দান সবার জন্য সমান হলে কমিশনও যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারে। লড়াইয়ের ময়দান তৈরি করার দায় অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের নয়। যারা রাষ্ট্র চালান তাদের। সেক্ষেত্রে নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ পক্ষসমূহের দায়ও কম নেই।
যারা নির্বাচনে পাশ করে জাতির জন্য আইন করবেন, দেশ চালাবেন তারা যদি আইন বা বিধি না মানেন তাহলে, বেচারা নন্দ ঘোষের উপর দোষ চাপিয়ে কোনো লাভ নেই। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গণতন্ত্রই প্রবাহমান হলো না। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের দু’একজন ব্যক্তির ঘাড়ে দায় দিয়ে পথ পাওয়া যাবে না।
নির্বাচন কমিশনকে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানোর দায়িত্ব পুরো রাষ্ট্রের। তবে এক্ষেত্রে ব্যক্তিকেও গুরুত্বহীন ভাবা ঠিক হবে না। বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিশ্চয়ই নিজেদের নামের ওপর সুবিচার করবেন। যা আগামীতে জাতির জন্য পথনির্দেশক হতে পারে।