রাজপথে নামবেন খালেদা জিয়া
আসছে ঘেরাও, অবস্থান কর্মসূচি
তারেক সালমান ও মাহমুদুল হাসান, দ্য রিপোর্ট : বর্তমান সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর দিকে তাকিয়ে আছে বিএনপি। তারানকোর সফরকালে নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে কোনো সমঝোতা না হলে হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। এর মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৩ ডিসেম্বর দেশের প্রতিটি থানা-জেলা নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং অফিসারের অফিস ঘেরাও, অসহযোগ এবং গণকারফিউ কর্মসূচির কথা ভাবছে ১৮ দলীয় জোট। জোটের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপকালে এসব কর্মসূচির আভাস পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, এসব কর্মসূচির বাইরে দাবি আদায়ের ‘শেষ’ খেলার অংশ হিসেবে বিরোধীদলীয় নেত্রী, ১৮ দলীয় জোট নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রাজপথে গণঅবস্থান নেওয়া হবে। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অথবা রাজধানীর আরও কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থান চলতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
সূত্র মতে, আন্দোলনের ফলাফল ঘরে তুলতে সময়ের ‘চাহিদা’ অনুযায়ী যেকোনো কর্মসূচি নিতে দ্বিধা করবে না বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। এক্ষেত্রে তারা ১৯৯৬ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগের ব্যাপক জঙ্গি কর্মসূচিকে অনুকরণ করবে।
সংলাপের মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় না হলে আরও কঠোর কর্মসূচির ইঙ্গিত দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে.(অব.) মাহবুবুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, চলমান সঙ্কটের সমাধান না হলে আন্দোলন চলছে, চলতে থাকবে। সঙ্কট উত্তোরণে বিদেশিদের দিয়ে কাজ হবে না। সঙ্কট সমাধান দেশের জনগণ ও দেশের রাজনীতিকদেরই করতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে দুই নেত্রীর মধ্যে সংলাপ হলেই সমাধান বের হয়ে আসবে।
জেনারেল মাহবুব আরও বলেন, জনগণের কোনো আন্দোলনই কখনও ব্যর্থ হয় না। যদি কোনো কারণে সংলাপ ব্যর্থ হয়, তাহলে আমাদের আন্দোলন আরও কঠিন-কঠোর হবে।
জোট সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীনরা বিভিন্ন সময় সংলাপের কথা বলে সময় ক্ষেপণের পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জোট নেতারা উপলব্ধি করছেন। সরকারের লক্ষ্য একতরফা নির্বাচন। সেই পথেই হাঁটছে তারা। যে কারণে তড়িঘড়ি করে একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন। সরকারের এ পদক্ষেপে এখন আর সমঝোতার কোনো পথ খোলা নেই। এ প্রেক্ষাপটে ১৮ দলীয় জোটের সামনে একটাই রাস্তা খোলা আছে তা আন্দোলন। এর মধ্যে নির্বাচনের তফসিল স্থগিতের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচিতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ জোটকে উজ্জীবিত করেছে। আন্দোলনের এ চূড়ান্ত মুহূর্তে বিজয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছেন না নেতারা।
এ ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে শেখ হাসিনার অনড় অবস্থানের কারণে দেশে ভয়াবহ রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। যা দেশের ইতিহাসের যে কোনো সময়ের চেয়েও ভয়ানক। যে কারণে আগামী দিনে গণতন্ত্র রক্ষায় যে কোনো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন দেশনেত্রী (খালেদা জিয়া)। গণআন্দোলনের মুখে সরকার দাবি মানতে বাধ্য হবে।
১৮ দলীয় জোটের শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান দ্য রিপোর্টকে বলেন, জাতিসংঘ তার সদস্য দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিরসনে কাজ করে। আমরা আশাবাদী আমাদের রাজনৈতিক সঙ্কট জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সমাধান হবে।
ইরান বলেন, আমরা রাজপথেই আছি। আন্দোলন সফলে যেকোনো প্রস্তুতি রয়েছে ১৮ দলীয় জোটের। সমাধান না হলে সামনের পরিস্থিতি হবে আরও ভয়াবহ। সরকার একতরফা নির্বাচন কোনোভাবেই করতে পারবে না। তিনি বলেন, একদলীয় নির্বাচনের অপচেষ্টায় সরকার নির্বাচনের ব্যালট পেপার দেশের কোনো প্রান্তেই নিতে পারবে না। সরকার পালানোর পথ খুঁজছে। যেকোনো সময় তারা পেছনের পথ দিয়ে পালিয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ও তফসিল স্থগিতের দাবিতে ১৮ দলীয় জোটের চলমান কর্মসূচিতে তৃতীয় দফা দেশব্যাপী অবরোধের ৭২ ঘণ্টা শেষ হবে মঙ্গলবার ভোর ৬টায়। ওই দিন পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করবেন জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। ১০ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে সফর ও রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে তার প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি তুলে ধরবেন তিনি। দেশে তারানকোর উপস্থিতি ও তার ফলাফল জানা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে বিএনপি। এর পর ১১ ডিসেম্বর থেকে আবার টানা কর্মসূচি শুরু হবে। মাঝে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপনের বিরতি দেওয়া হবে কর্মসূচিতে। এরপরও সমঝোতার পথ খোলা রেখেই আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
(দ্য রিপোর্ট/টিএস-এমএইচ/শাহ/এইচএসএম/ডিসেম্বর ০৮, ২০১৩)