দ্য রিপোর্ট কূটনৈতিক প্রতিবেদক : বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা মামলার শুনানি শুরু হচ্ছে সোমবার থেকে। নেদারল্যান্ডের রাজধানী হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক সালিশী আদালতে (পার্মানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন) এই শুনানিতে অংশ নিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে নেদারল্যান্ডে পৌঁছেছেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে এ মামলার চূড়ান্ত রায় হতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নেদারল্যান্ডের আদালতে দুই দফায় আট দিন ধরে এ শুনানি চলবে। আর এর রায় প্রকাশিত হতে পারে আগামী বছরের জুন মাস নাগাদ। শুনানিতে সদ্য দায়িত্ব নেওয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী উপস্থিত থাকবেন। হেগের আদালতে এই শুনানিতে অংশ নিতে একটি প্রতিনিধি দল শনিবার রাতে নেদারল্যান্ডে গেছেন।

বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খুরশেদ আলম বলেন, সমুদ্রসীমা নির্ধারণের আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। তবে দেশ দুইটির মধ্যকার সমুদ্রের ভূমির প্রকৃতি বিবেচনায় আন্তর্জাতিক আইন অনুসারেই বাংলাদেশ ন্যায্যতাভিত্তিক সমাধান আশা করে।

তিনি বলেন, এই মামলার ফয়সালার মাধ্যমে পূর্ব উপকূল থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বাংলাদেশের জলসীমা নির্ধারণ হয়ে যাবে।

সূত্র জানায়, সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারতের সঙ্গে মূল বিরোধ জলসীমা শুরুর স্থান নিয়ে। এক্ষেত্রে ভারত সমদূরত্বেরভিত্তিতে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে চাইলেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বরাবরই ন্যায্যতারভিত্তিতে সীমা নির্ধারণের দাবি জানানো হয়। সে বিষয়টিরই সুরাহা করবেন আন্তর্জাতিক সালিশ আদালত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের যুক্তি অনুযায়ী ভূমির মূল বিন্দু থেকে সমুদ্রের দিকে ১৮০ ডিগ্রির সোজা রেখা যাবে। তবে ভারতের যুক্তি সমুদ্রতট বিবেচনায় এ রেখা হবে ১৬২ ডিগ্রি। মামলায় বাংলাদেশের পক্ষে এসব বিষয়ে এর আগে নানা ধরনের লিখিত যুক্তি ও তথ্য-উপাত্ত আদালতে জমা দেওয়া হয়। এখন এ বিষয়ের ওপরই মৌখিক শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক ওই আদালতের শুনানিতে ভারতের পক্ষে অংশ নেবেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. নীরু চৌধুরী।

বাংলাদেশের পক্ষে মামলা পরিচালনায় অংশ নেবেন মার্কিন আইনজীবী সংস্থা ফলি হগ। ওয়াশিংটন ডিসিতে ১ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে মার্কিন আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ওই বৈঠকেই ৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া শুনানীতে বাংলাদেশের সম্ভাব্য কর্মকৌশল সম্পর্কে আলোচনা হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সমুদ্রসীমা নির্ধারণে আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। তবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সমুদ্রের ভূমির প্রকৃতি বিবেচনায় আন্তর্জাতিক আইন অনুসারেই বাংলাদেশ ন্যায্যতাভিত্তিক সমাধান আশা করে। এই মামলার ফয়সালার মাধ্যমে পূর্ব উপকূল থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বাংলাদেশের জলসীমা নির্ধারণ হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৪ মার্চ মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা মামলায় জয়লাভ করে বাংলাদেশ। তারপর থেকেই ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষে জোর তৎপরতা শুরু করা হয়।

(দ্য রিপোর্ট/জেআইএল/এসবি/ডিসেম্বর ০৮, ২০১৩)