১ মাসে বিরোধী দলের ২০ নেতাকর্মী নিখোঁজ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের পাঠাগার সম্পাদক মফিজুর রহমান আশিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র জিয়াউর রহমান শাহীনসহ ১৮ দলীয় জোটের ২০ জনেরও বেশী নেতাকর্মী নিখোঁজ হয়েছেন।
জোটের অভিযোগ সারাদেশে তাদের কমপক্ষে ৫০ জন নেতাকর্মী নিখোঁজ রয়েছেন। ইতোমধ্যে এদের কয়েকজনের মৃতদেহও পাওয়া গেছে। নিখোঁজ নোতকর্মীদের আইন-শৃ্ঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জোটের পক্ষ থেকেও অভিযোগ করা হয়েছে।
তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ছাত্রদল নেতা আশিক ও কর্মী শাহীন বৃহস্পতিবার রাত থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা সরকারি দলের কোনো ক্যাডার গ্রুপ তাদেরকে গুম করতে পারে বলে অভিযোগ নিখোঁজ পরিবারের।
আশিকের ছোট ভাই হামিদুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে আশিকের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে অপরিচিত এক ব্যক্তি তা রিসিভি করেন। এ সময় হৈ চৈ শব্দ শোনা যায়, কোনো কথা না বলেই ওই ব্যক্তি ফোন কেটে দেন। এরপর থেকে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি আরো জানান, আশিকের নিখোঁজের ঘটনায় শনিবার বিকেলে পল্লবী থানায় জিডি করা হয়েছে। জিডি নং ৫০৫।
এদিকে শাহীনের নিখোঁজের ঘটনায়ও মিরপুর থানায়ও জিডি করেছে তার পরিবার। জিডি নং ৬২৮।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র জানান, নিখোঁজের দিন বিকেলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা ও আঞ্চলিক সিনিয়র ভাই মফিজুর রহমান আশিকের পল্লবীর বাসায় দেখা করতে যান মুহসীন হলের আবাসিক ছাত্র জিয়াউর রহমান শাহীন। এরপর আর তিনি ক্যাম্পাসে ফেরেননি।
এদিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসির কেন্দ্রীয় নেতা মফিজুর রহমান আশিক নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা অবিলম্বে প্রশাসনকে আশিকের অবস্থান নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
মেধাবী ছাত্রনেতা মফিজুর রহমান আশিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগ থেকে অনার্স-মাস্টার্স পাশ করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বাশঁখালী উপজেলায়। তিনি স্যার এএফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। আর জিয়াউর রহমান শাহীনের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারে।
নিখোঁজের পর আশিকের পল্লবীর বাসায় গিয়ে দেখা যায় তার রুমটি তালাবদ্ধ। তার ভাই তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করেন। রুমে কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।
ভবনের এক বাসিন্দা জানান, বৃহস্পতিবার আছরের পর আশিক বাসা থেকে বের হন। এরপর তিনি আর ফেরেননি।
এদিকে, দুই ছাত্রদল নেতার নিখোঁজের ঘটনায় বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গত প্রায় এক মাসের মধ্যে সারাদেশে অন্তত ২০ জনের অধিক নেতাকর্মী নিখোঁজ বা গুমের শিকার হয়েছে বলে বিএনপি অভিযোগ করেছে।
এসব হতভাগ্য পরিবারের অভিযোগ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তাদের উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। নিখোঁজের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।
বিরোধী দল থেকে প্রায় এক মাসে নিখোঁজ হওয়া নেতাকর্মীদের মধ্যে নীলফামারীর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন প্রামাণিক ও সীতাকুণ্ডের বারবকুণ্ড ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি আমিনুল ইসলাম আমীনসহ কয়েকজনের ক্ষতবিক্ষত লাশের সন্ধান মিলছে।
এর আগে ২৮ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে থেকে সাদা পোশাকধারী একদল লোক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে বিএনপির পাঁচজন কর্মীকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি-নং ১২৩৫, ২৯ নভেম্বর’১৩) করা হয়েছে।৪ ডিসেম্বর গুলশান আমেরিকান দূতাবাসের সামনে থেকে র্যাব পরিচয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আসাদুজ্জামান রানা, মাযহারুল ইসলাম রাসেল ও আল আমিন নামের চার ছাত্রদলকর্মীকে আটক করলেও এখন পর্যন্ত তাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না বলে ছাত্রদল দাবি করেছে।
ঢাকা মহানগরীর ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সুমনকে ৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে র্যাব-১ গ্রেফতার করে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। কিন্তু র্যাবের পক্ষ থেকে এ গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করা হয়।
এ ছাড়াও সূত্রাপুর ও বংশালের ছাত্রদল কতোয়ালি থানার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হান সেন্টু, সহ সভাপতি সোহেল, ৭১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি মো. জহির ও সাধারণ সম্পাদক মো. পারভেজ, ৭২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল সহ সভাপতি সাব্বির, বংশাল থানা ছাত্রদল সদস্য চঞ্চল, ৭১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল সদস্য মো. কালু এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন বলে ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদ এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছেন, সারাদেশে অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরা সাদা পোশাকের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়েছে। নিখোঁজের ঘটনায় মামলা অথবা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলেও এখন পর্যন্ত একটি ঘটনারও রহস্য উন্মোচিত হয়নি।
উল্লেখ্য, গুম হওয়া বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী ও কমিশনার চৌধুরী আলমের সন্ধান আজও মেলেনি।
ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ গুম-নিখোঁজ ও হতাহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
(দ্য রিপোর্ট/টিএস/এসবি/ডিসেম্বর ০৯, ২০১৩)