বালি সম্মেলনে বাংলাদেশ লাভবান হয়েছে : বাণিজ্য সচিব
দ্য রিপোর্ট জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : সদ্য সমাপ্ত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বালি সম্মেলনে বাংলাদেশ লাভবান হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ।
বালি সম্মেলন শেষে দেশে ফিরে সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
উল্লেখ্য, গত ৩ থেকে ৬ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার বালি-তে ডব্লিউটিও-র মন্ত্রী পর্যায়ের নবম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সচিব বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর বাজারে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা পাবে। একইসঙ্গে বালি সম্মেলনে গৃহীত অন্যান্য প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের রফতানি বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সচিব জানান, বালি প্যাকেজে তিনটি ইস্যু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই ইস্যু তিনটি হচ্ছে- ডেভেলপমেন্ট ইস্যু, বাণিজ্য সহজিকরণ চুক্তি ও কৃষি। এগুলোর মধ্যে ডেভেলপমেন্ট ইস্যুর আওতায় চারটি স্বল্পোন্নত দেশের ইস্যু ও মনিটরিং মেকানিজম রয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশের চারটি ইস্যু হচ্ছে- শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা, রুলস অব অরিজিন, সার্ভিসেস ওয়েভার বাস্তবায়ন ও কটন ইস্যু। এছাড়া দোহা রাউন্ডের এজেন্ডাভুক্ত অবশিষ্ট ইস্যুসমূহ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট একটি ওয়ার্ক প্রোগ্রাম তৈরি করা হবে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশের চারটি ইস্যুর আওতায় প্রাপ্য সুবিধাদি ব্যাখ্যা করে সচিব বলেন, শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, হংকং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেসব উন্নত দেশ এখনো কমপক্ষে ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা প্রদান করেনি, তারা ডব্লিউটিও’র আগামী সম্মেলনের আগে প্রদেয় এসব সুবিধা বাড়াবে।
অন্যদিকে রুলস অব অরিজিন সহজ ও স্বচ্ছ করার জন্য প্রথমবারের মতো একটি গাইড লাইন তৈরি করা হয়েছে। যদিও এই গাইড লাইন অনুসরণ বাধ্যতামুলক নয়, তবুও এটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে স্বল্পেন্নত দেশগুলো।
স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অনুকূলে গৃহীত সার্ভিসেস ওয়েভার বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, সার্ভিসেস কাউন্সিলকে ওয়েভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এলডিসি গ্রুপের পক্ষ থেকে যৌথ ‘রিকোয়েস্ট’ প্রণয়ন করা হবে এবং এরপর একটি উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে উন্নত দেশগুলো কোন কোন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার সুবিধা দেবে তা জানাবে।
কটন ইস্যু প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, তুলা উৎপাদনকারী চারটি (বেনিন, বুরকানি ফাসো, মালি ও চাদ) দেশের জন্য তুলা রফতানিতে বাজার সুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্যে তুলার জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান এবং উন্নত দেশে তুলা উৎপাদনের ওপর ‘ডোমেস্টিক সাপোর্ট’ প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে।
মনিটরিং মেকানিজম সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সচিব বলেন, ডব্লিউটিও’র বিভিন্ন চুক্তির আওতায় বিদ্যমান ‘স্পেশাল অ্যান্ড ডিফারেনশিয়াল ট্রিটমেন্ট’ (এস অ্যান্ড ডি) বাস্তবায়ন মনিটরিং করার একটি মেকানিজম প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে এস অ্যান্ড ডি ট্রিটমেন্ট সঠিক বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। প্রায় দশ বছর নেগোসিয়েশন চালানোর পর এটি পাস করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি।
বালি সম্মেলনে বাণিজ্য সহজিকরণ বিষয়ে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ ও সময় কমবে এবং ব্যবসা আরো প্রতিযোগিতামূলক হবে।
কৃষি সম্পর্কিত বিষয়ে খাদ্য নিরাপত্তার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে পাবলিক স্টকহোল্ডিং-এর আওতায় উন্নয়নশীল দেশ কর্তৃক খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিতরণ করার লক্ষ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন মেকানিজম প্রবর্তনে সকল দেশ একমত হয়েছে। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত একটি স্থায়ী ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। অন্তর্বর্তীকালীন মেকানিজমের আওতায় শর্ত সাপেক্ষে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ভর্তুকি প্রদান করা হলেও তা ‘ডিসপিউট সেটেলমেন্ট’-এ কোনো মামলা করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট / এসআর /এমডি/ ডিসেম্বর ০৯, ২০১৩)