প্রস্তুত মঞ্চ : অপেক্ষায় জল্লাদ
কাজী জামশেদ নাজিম, দ্য রিপোর্ট : যে কোনো সময় কার্যকর হতে পারে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়। মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে মতামতসহ রায়ের কপি ফেরত পাওয়ায় ফাঁসি কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকছে না। ফাঁসি কার্যকরের সকল কার্য সম্পন্ন করছে কারা কর্তৃপক্ষ। প্রস্তুত রয়েছে ফাঁসির মঞ্চ। অপেক্ষায় রয়েছে ৫ জল্লাদ। বিদ্যুৎ সংযোগ ও সামিয়ানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।
কারা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ টাইব্যুনাল থেকে কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা ও পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়। সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির মতামতসহ রায়ের কপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে এসে পৌঁছেছে। জানা গেছে, মতামতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ফরমান আলী বলেছেন, রাষ্ট্রপতির মতামতসহ রায়ের কপি এসে পৌঁছানোর ফলে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর নির্ভর করছে সরকারের উপর। রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পাওয়া মতামতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে কাগজপত্র আসছে। নথিপত্রগুলো দেখাশুনার কাজটি আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে পরিচালনা হচ্ছে। ঠিক এই মূহুর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।
এর আগে কারা মহাপরিদর্শক মাইনুদ্দিন খন্দকার জানান, আমরা গতকাল (রবিবার) কাদের মোল্লার সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি মার্সি পিটিশনের সিদ্ধান্ত এখনো নেননি। সিদ্ধান্ত জানানোর বিষয়ে তিনি একদিন সময় চেয়েছেন। সে সময় আজ (সোমবার) শেষ হয়েছে। এখনো তিনি কিছু জানাননি।
কারা সূত্র জানায়, গতকাল দুপুরে এক বিচারক আকস্মিক পরিদর্শনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান। সেখানে তিনি ৩টি ফাঁসির মঞ্চ এবং কনডেম সেল ঘুরে দেখেন। এর আগে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের কপি কারা কর্তৃপক্ষ হাতে পেয়ে তাৎক্ষণিক কনডেম সেলে তার কাছে পৌঁছে দেয়। রায়ের কপি পাওয়ার পরই কাদের মোল্লা তার আইনজীবী ও স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের ইচ্ছাপোষণ করেন। এসময় কাদের মোল্লা কিছুটা বিমর্ষ হয়ে সেলের মেঝেতে বসে পড়েন। সব মিলিয়ে অস্থিরতার কারণে গতকাল দুপুরে খাবার খাননি কাদের মোল্লা।
এদিকে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করতে সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। ফাঁসির মঞ্চ ও ফাঁসির রশি (ম্যানিলা রৌপ)সহ আনুষাঙ্গিক সকল বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। জেল সুপার ফরমান আলী দ্য রিপোর্টকে বলেন, জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করতে বিশেষ কোনো মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে না। কারাগারে সব সময়ই ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত থাকে। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত যে কোনো কয়েদিকে ফাঁসি দেয়ার আগে মঞ্চটি সংস্কার করা হয়।
কারা সূত্র জানায়, সম্প্রতি ফাঁসি কার্যকর করার জন্য বেশ কয়েকজন জল্লাদকে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিয়ে পাকাপোক্ত করা হয়েছে। জল্লাদের মধ্যে- জল্লাদ সর্দার শাহজাহান ভূইয়াসহ ৫ জন জল্লাদকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া ৩ জন গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং আরো কয়েকজনকে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা, খুলনা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে। এদের মধ্য থেকে যে কোনো একজন জল্লাদকে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের দায়িত্ব দেয়া হবে।
জানা গেছে, জল্লাদদের গত আগস্ট মাস থেকে শুরু করে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকরের মহড়া দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষিত করে তোলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জল্লাদদের। তবে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে আগাম প্রস্তুতি তথ্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সকল কর্মকর্তা গোপন করে যাচ্ছেন।
কারা সূত্র জানায়, মৃত্যু পরোয়ানা জারির পর রাজধানীতে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের প্রহরা বাড়ানো হয়। কূটনৈতিক এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। এমনকি নিরাপত্তা ছক থেকে বাদ যায়নি পুলিশ সদর দফতরও। চোরাগোপ্তা হামলা, বিশৃংখলাসহ যে কোন ধরনের নাশকতা মোকাবেলায় ডিএমপির ৩২টি স্পর্শকাতর পয়েন্টে কঠোর গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স, দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রবিবার বিকেল থেকেই দোয়েল চত্বর, বঙ্গবাজার এলাকা, সচিবালয়ের প্রবেশপথ ও মৎস্যভবন সংলগ্ন রাস্তার দুইপাশেও পুলিশি ব্যারিকেড দিয়ে রাখা হয়েছে। হাইকোর্ট চত্বরে গাড়ি প্রবেশের ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করে পুলিশ। ট্রাইব্যুনালের বিচারক, প্রসিকিউটর ও সাক্ষীদের নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে। বিচার সংশ্লিষ্ট এসব ব্যক্তিদের বাসভবনে মোতায়েন করা হয়েছে হাউস গার্ড।
মামলার ইতিবৃত্ত
মুক্তিযুদ্ধকালে মোস্তফা নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কাদের মোল্লাসহ কয়েকজন জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। এছাড়া ২০০৮ সালে পল্লবী থানায় আরো একটি মামলা হয় কাদেরের বিরুদ্ধে। এ মামলাতেই ২০১০ সালের ১৩ জুলাই জামায়াতের এই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১১ সালের ১ নভেম্বর কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যা, খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ।
(দ্য রিপোর্ট/ কেজেএন/ এমডি/ ডিসেম্বর ০৯, ২০১৩)