ম্যান্ডেলার শেষ যাত্রায় সঙ্গী সারাবিশ্ব
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : নিপীড়িত মানুষের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার শেষকৃত্যে অংশ নিতে সত্তরেরও বেশি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা যাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। ডিসেম্বরের ১৫ তারিখে এই শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্লেসন মনিয়েলা বলেন, পুরো বিশ্ব দক্ষিণ আফ্রিকায় আসছে।
সাম্প্রতিক ইতিহাসে এটি হতে যাচ্ছে বিশ্ব নেতাদের সবচেয়ে বড় জমায়েতগুলোর একটি। একই সঙ্গে বলা যায়, বিপরীত মতাদর্শের রাষ্ট্র প্রধানদের অন্যতম বড় জমায়েতও।
দেশটির প্রেসিডেন্ট দফতর থেকে বলা হয়েছে, কম সময়ের মধ্যে বিশ্বনেতারা দক্ষিণ আফ্রিকায় আসছেন- এটা বলে দেয় সারাবিশ্বের মানুষ ম্যান্ডেলাকে নিজেদের হৃদয়ে স্থান দিয়েছেন। অনেক দেশ ম্যান্ডেলার জন্য শোক প্রকাশ করছে, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখেছে- আমরা এই ভালোবাসায় আপ্লুত।
বিশ্বের ক্ষমতাবান সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান ছাড়া আরো হাজির হচ্ছেন ইউএন, ইউরোপীয়ান কমিশন ও আফ্রিকান ইউনিয়নসহ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থার প্রধান ও প্রতিনিধিরা। এছাড়া থাকছেন অসংখ্য বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যটক। যারা সারাবিশ্বের মানুষকে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের বিস্তারিত জানাবেন।
ম্যান্ডেলাকে সমাহিত করা হবে তার গ্রামের বাড়ি কুনু-র পারিবারিক গোরস্তানে। দক্ষিণ আফ্রিকার সেনাবাহিনী গ্রামটিকে কড়া নিরাপত্তায় ঘিরে রেখেছে। ইতোমধ্যে দেশটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিভাগ জানিয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এখান থেকে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে কোটি কোটি শোক পালনকারী ম্যান্ডেলার শেষ যাত্রায় শরিক হবেন।
যারা উপস্থিত থাকবেন:
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ সাবেক বেশ ক’জন রাষ্ট্রপ্রধান ম্যান্ডেলার শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকবেন। তারা হলেন জিমি কার্টার, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বিল ক্লিনটন ও তাদের স্ত্রীরা এবং ২৬ কংগ্রেস সদস্য। এদের মধ্যে ক্লিনটনের সাথে ম্যান্ডেলার ব্যক্তিগত হৃদ্যতা ছিলো। অন্যদিকে, ইরাক যুদ্ধ প্রসঙ্গে বুশ ও ম্যান্ডেলার অবস্থান ছিলো বিপরীতমুখী। তবে তারা এইডসের বিরুদ্ধে একই সঙ্গে কাজ করেছেন। উল্লেখ্য যে, দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী তালিকায় ম্যান্ডেলার নাম ছিলো। তার ৮৭ বছর বয়সে ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়।
বৃহস্পতিবারের স্মরণানুষ্ঠানে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। ব্রিটিশ রাণীর পক্ষ থেকে শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকবেন প্রিন্স চার্লস।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সোমবার দক্ষিণ আফ্রিকায় যাচ্ছেন। উল্লেখ্য যে, কিংবদন্তি এই নেতার মৃত্যুতে বাংলাদেশ তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করেছে। বর্ণবাদের কারণে শ্বেতাঙ্গ শাসিত দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক বছর কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিলো না। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ম্যান্ডেলা স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ১৯৯৭ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশে এসেছিলেন। সফরকালে ঐতিহাসিক ভাষণে জানান, বাংলাদশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তার অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ডিলমা রুসেফের সাথে আসবেন চার প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধান। এছাড়া আশা করা হচ্ছে চীন, ইরান, ভারত, কিউবা, ইসরায়েল, ফিলিস্তিন, নর্থ আয়ারল্যান্ডের নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
আশা করা হচ্ছে দুই ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস ও দালাইলামা উক্ত অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন। থাকছেন আমেরিকার মানবাধিকার কর্মী ও ব্যাপিস্ট মিনিস্টার জেসে লুই জ্যাকসন। বিল গেটস, বুনু, নওমি ক্যাম্পবেল ও অপেরাহ উইনফ্রে’সহ রাজনৈতিক নেতৃত্বের বাইরে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, চলচ্চিত্র, সংগীত, ধর্মীয় অঙ্গনের প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও এই অনুষ্ঠানে থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
শোকের অনুষ্ঠান:
এর আগে প্রেসিডেন্ট জুমা ৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার থেকে দশদিনের রাষ্ট্রীয় শোর্ক ঘোষণা করেন। এক নজরে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান সূচি-
ডিসেম্বর ৮: জাতীয়ভাবে প্রার্থনা অনুষ্ঠান।
ডিসেম্বর ৯: ম্যান্ডেলার সন্মানে দুই সংসদে বিশেষ অধিবেশন।
ডিসেম্বর ১০: জোহান্সবার্গের এফএনবি স্টেডিয়ামে জনসাধারণের উপস্থিতিতে স্মরণানুষ্ঠান।
ডিসেম্বর ১১ থেকে ১৩: ম্যান্ডেলার মরদেহ তিনদিনের জন্য প্রিটোরিয়ার ইউনিয়ন বিল্ডিংয়ে রাখা হবে। এছাড়া ওয়াশিংটন ডিসিসহ সারাবিশ্বে তার জন্য স্মরণ অনুষ্ঠান করা হবে।
ডিসেম্বর ১৪: মিলিটারি বিমানে করে মৃহদেহ মথাথা শহরে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানকার রাস্তা ঘুরে তার মৃহদেহ শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কুনু গ্রামে পৌঁছবে।
ডিসেম্বর ১৫: রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে সমাহিত করা হবে।
বিদেশ থেকে আসা অতিথিবৃন্দের বড় অংশ হাজির হবেন ১০ ডিসেম্বরের স্মরণানুষ্ঠানে। ওই দিনে সরকারিভাবে ম্যান্ডেলাকে স্মরণ করা হবে রাজধানী জোহান্সবর্গের এফএনবি স্টেডিয়ামে। ধারনা করা হচ্ছে ম্যান্ডেলাকে স্মরণ করতে ৯৫ হাজার সাধারণ মানুষ হাজির হবেন। অনুষ্ঠানকে ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানে যারা থাকতে চান তাদেরকে নিজস্ব গাড়ির বদলে পাবলিক গাড়ি ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। সরকার জনগণকে অনুরোধ করছে স্থানীয় স্মরণানুষ্ঠানে যোগ দিতে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শোককারীদের নিয়ে আসার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এদিকে অতিরিক্ত জনসমাগমের জন্য এলিস পার্ক, অরলান্ডো ও ডবসনভিল স্টেডিয়ামকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। এসব স্থানে এফএনবি-র অনুষ্ঠান দেখানোর জন্য বড়পর্দার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
৫ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার স্থানীয় সময় রাত আটটা ৫০ মিনিটে জোহানেসবার্গের নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ম্যান্ডেলা। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর চার মাস ১৭ দিন। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের এই মহান নেতার মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/সাদি/এমডি/ডিসেম্বর ০৯, ২০১৩)