দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: নির্দলীয় সরকার প্রশ্নে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো দ্বিতীয়বারের মতো দেখা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনে তাদের মধ্যে দীর্ঘ প্রায় ১ ঘন্টা বৈঠক চলে।

বৈঠকে তারানকোর সঙ্গে অন্য প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের ইলেক্টোরাল অ্যাসিস্টেন্ট ডিভিশনের ডাইরেক্টর ক্যাইজি জেনিস, তারানকোর বিশেষ সহকারী গেইনলুকা রামপোলা, সিনিয়র মেডিয়েশন এক্সপার্ট মেরী জোলী জাহার, পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার সনজা ব্যাচমানান ও বাংলাদেশের জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি নীল ওয়াকার।

বিএনপির পক্ষে আরও ছিলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহউদ্দিন আহমদ।

বৈঠক শেষে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এই নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিবের দ্বিতীয় দফা বৈঠক হল। বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি (তারানকো) গুরুত্বপূর্ণ সফরে এসেছেন। আলোচনা চলছে, আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

এদিকে, বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তারানকোর সঙ্গে খালেদা জিয়ার আলোচনা হয়। আলোচনায় খালেদা জিয়া বিএনপি ও বিরোধীদলীয় জোটের পক্ষ থেকে কয়েকটি শর্ত তারানকোর হাতে তুলে দেন। এসব শর্ত পূরণ হলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। এর মধ্য দিয়ে চলমান সংকট সমাধান হতে পারে বলেও তারানকোকে জানিয়ে দেন। এসব শর্তের উল্লেখযোগ্য অংশ সমাধান হলে নির্বাচনকালীন সরকার ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক’ না হয়ে ‘সর্বদলীয়’ হলেও আপত্তি নেই বিএনপির বলে জানিয়ে দেন তিনি। তিনি আরও জানান, শর্তপূরণ হলে নির্বাচনে জয়-পরাজয় যাই হোক, মেনে নিতে রাজি তার নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট।

সূত্র জানায়, চলমান সংকট নিরসনে খালেদা জিয়া তারানকোর হাতে যেসব শর্ত তুলে দেন তার মধ্যে রয়েছে- সংসদ ভেঙে দেয়া, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন সরকারের কোন পদে তার না থাকা, নির্দলীয় কোন ব্যক্তিকে নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান করতে আওয়ামী লীগের আপত্তি থাকলে ওইপদে রাষ্ট্রপতিকে বসানো, নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন এবং জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানের কাছেই রাখা এবং রাজনৈতিক হয়রানীমূলক মামলায় ১৮ দলীয় জোটের কারাবন্দি নেতাদের অবিলম্বে মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার।

বিএনপির সূত্রের মতে, এসব গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলোর লিখিত একটি কপি খালেদা জিয়া অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর কাছে তুলে দেন। একই সঙ্গে তিনি এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে তার অগ্রগতি সম্পর্কে দ্রুত বিরোধী দলকে জানানোরও অনুরোধ করেন।

উল্লেখ্য, এসব বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনার জন্য তারানকো রবিবার রাতে বিএনপি নেতা শমসের মবিন চৌধুরীর সঙ্গে তার বনানী ডিওএসএইচের বাসায় দীর্ঘ সময় আলোচনা করেন।

আলোচনা শেষে ওই রাতে শমসের মবিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আগামীকাল বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।’

এদিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারানকোর বৈঠক শেষ হওয়ার পর একে একে আসতে থাকেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। দীর্ঘ দিন আত্মগোপনে থেকে হঠাৎ করেই সোমবার রাতে দলীয় প্রধানের বাসভবনে আসেন তারা।

প্রথমে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক এরপর আসেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। রাত ৭ টা ৩৩মিনিটে খালেদা জিয়ার বাসায় আসেন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান। রাত ৭টা ৪০মিনিটের দিকে অনেকটা দৌঁড়ে খালেদা জিয়ার বাসভবনে প্রবেশ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ৭টা ৫৫ মিনিটে আসনে সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ।
পরবর্তিতে তারাও খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন।

(দ্য রিপোর্ট/টিএস-এমএইচ/ নূরু/এমডি/ডিসেম্বর ০৯, ২০১৩)