লন্ডনে ‘ভাইয়া’র সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে বাণিজ্য!
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : লন্ডনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করা নিয়ে কিছু অসাধু লোক বাণিজ্য করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের প্রবাসী নেতারা। সেখানে তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য অবস্থান করছেন।
এই বাণিজ্যের সঙ্গে গত ওয়ান ইলেভেনের প্রেক্ষাপটে দেশ থেকে বিতাড়িত বা নির্বাসিত আলোচিত হাওয়া ভবনের একজন এবং ওই হাওয়া ভবন ঘনিষ্ঠ এক সাংবাদিক জড়িত বলে প্রবাসী নেতারা অভিযোগ করেছেন। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার ওই সাংবাদিকের নামের সংক্ষিপ্তরূপ এসএস।
প্রবাসী নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, প্রায় সময়ই বাংলাদেশ থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কিছু নেতা, কিছু নিষ্ক্রিয় নেতা, কিছু বিতর্কিত নেতা দলের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারী হিসেবে পরিচিত তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করতে লন্ডন যান। তারেক মাঝে মাঝে লন্ডন বিএনপি আয়োজিত দু‘একটি দলীয় কর্মসূচি ছাড়া কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেন না। একই সঙ্গে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত দেখাও করেন না। সে কারণে সাক্ষাৎ প্রার্থী
অনেকের ভাগ্যে ‘তারেক দর্শন’ হয় না। অথচ অনেকে লন্ডনে তার দেখা না পেয়েও দেশে সাধারণ কর্মীদের মধ্যে এমনকি দলীয় ফোরামে অবৈধ প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে অপপ্রচার করে থাকেন, লন্ডনে গিয়ে ‘ভাইয়া’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এলাম। সঙ্গে আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়নও নিশ্চিত করে এলাম।
লন্ডনে তারেক রহমানের সান্নিধ্য পান শুধু লন্ডন বিএনপির সংশ্লিষ্ট কিছু নেতা। তাদের মধ্যে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস ও সাধারণ সম্পাদক কয়সর আহমেদ। দেশ থেকে কোনো নেতা লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য গেলেও তাদের লন্ডন বিএনপির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে যেতে হবে। এটা তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া আছে। অথচ অনেকেই না বুঝে সেখানে গিয়ে প্রতারণার মুখে পড়েন। সাবেক হাওয়া ভবন সংশ্লিষ্ট ওই বিতর্কিত ব্যক্তি এবং ওই সাংবাদিকও পূর্ব সম্পর্কের কারণে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ পেয়ে থাকেন। তারা এই সুযোগকে অবৈধভাবে কাজে লাগিয়ে থাকেন। নিজেরা সাক্ষাতের সিডিউল পেয়ে টাকার বিনিময়ে দু‘একজনকে ‘ভাইয়া’র সামনে নিয়ে যান। তখন আর তারেক রহমানের কিছু করার বা বলার থাকে না। তবে, এসব লোকদের এমন ব্যবহারে তিনি মনক্ষুণ্ন হন। ক্ষুব্ধ হন।
যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতারা বলেন, দেশে আন্দোলন চলছে। প্রতিদিন নেতাকর্মীরা প্রাণ দিচ্ছে। অথচ এর মাঝে আন্দোলন ছেড়ে অনেকেই নিজেদের গা বাঁচাতে লন্ডনে এসে বসে থাকেন। এসব কারণেও তারেক রহমান ক্ষুব্ধ হন।
তারা জানান, দেশে নির্বাচনের অনিশ্চয়তার মধ্যেও এখান থেকে কিছু নেতা লন্ডনে গিয়ে শুরু করেন আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশায় দৌড়ঝাঁপ। এ দৌড়ঝাঁপকে ভাল চোখে দেখছেন না সাধারণ নেতাকর্মীরা। বিষয়টিতে বিএনপির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রভাবশালী নেতা তারেক রহমানও বিব্রত ও অনেকটাই ক্ষুব্ধ বলে সূত্র জানিয়েছে।
প্রবাসী নেতারা ওই সব নেতাদের ‘দুধের মাছি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, তারা লন্ডনে এসে ‘ভাইয়া’র (তারেক রহমান) সরলতার সুযোগ নিয়ে কিছু টাউট শ্রেণীর মানুষের মাধ্যমে তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন। অনেকে সাক্ষাৎ না পেয়েও দেশে ফিরে নিজেদের সুবিধা আদায়ের জন্য প্রচার করেন ভাইয়ার সঙ্গে দেখা করে এলাম। তারা অভিযোগ করেন এই সুবিধাবাদী চক্রের সঙ্গে দেশে এক সময়ে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হাওয়া ভবনের এক কর্মী যিনি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে থাকেন। তিনি ও একজন হাওয়া ভবন ঘনিষ্ঠ প্রবাসী সাংবাদিক রয়েছেন।
৫ বছর দুই মাসেরও অধিককাল লন্ডনে চিকিৎসার উদ্দেশে অবস্থান করছেন তারেক রহমান।
লন্ডন প্রবাসী যুক্তরাজ্য বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য রিপোর্টকে বলেন, তারেক রহমান সচরাচর কারও সঙ্গে দেখা দেন না। দেশ (বাংলাদেশ) থেকে কোনো দলীয় নির্দেশনামূলক প্রয়োজনে যথাযথ প্রক্রিয়ায় কোনো নেতা যদি যুক্তরাজ্যে আসেনও তবে তাকে ওনার সঙ্গে দেখা করতে হয় যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস ও সাধারণ সম্পাদক কয়সর আহমেদের মাধ্যমে। এ ছাড়া তিনি কাউকে দেখা দেন না। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় দু‘একজন সুবিধাবাদী লোক আছেন, যারা ভাইয়ার সরলতার সুযোগ নিয়ে অন্যদের সঙ্গে যেমন প্রতারণা করে, তেমনি তারেক রহমানের সঙ্গেও প্রতারণা করে।
জানা গেছে, দেশ থেকে তারেক রহমানের সাক্ষাৎ পাওয়ার আশায় যেসব নেতারা লন্ডনে যান, কিছু বিতর্কিত মানুষের কারণে তারাও প্রতারণার শিকার হন। অনেক সময়ই তারা কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির দেখাতো পান-ই না, উপরন্তু অনেকে খুইয়ে বসেন বিপুল পরিমাণ টাকা। সূত্র উদাহরণ দিয়ে বলে, সম্প্রতি লন্ডনের কেন্ট শহরে মোগল নামক একটি বিখ্যাত রেস্টুরেন্টে একটি বিবাহ উত্তর সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সংবর্ধনাটি ছিল ঢাকার রফিক নামের এক ব্যক্তির, যিনি কিছুদিন অসুস্থ তারেক রহমানের সেবা করার দায়িত্ব পালন করেন। রেস্টুরেন্টটি সিলেটের ছাতক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মিজানুর রহমানের। রফিক অনেক চেষ্টা তদবির করে ওই সংবর্ধনায় তারেক রহমানকে দাওয়াত দেন। অনুষ্ঠানে তারেক রহমান আসবেন এ তথ্য শুনে মোগলের মালিক মিজান ভাড়া বাবদ কোনো টাকাও নেননি। অনুষ্ঠানে তারেক রহমান এসেছিলেন। আয়োজকদের মধ্যে হাওয়া ভবনের সাবেক এক বিতর্কিত ব্যক্তি এবং লন্ডন প্রবাসী এক সাংবাদিকও ছিলেন। পরে জানা গেছে, সংবর্ধনার আয়োজকরা ওই অনুষ্ঠানে আগত চার শতাধিক মেহমানের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ পাউন্ড হাতিয়ে নেন। এ তথ্য জেনে তারেক রহমান প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন এবং রফিককে আগের মতো আর নিজের কাছে ভিড়তে দেন না।
সূত্র আরও জানায়, কিছুদিন আগে লন্ডন গিয়েছিলেন তারেক রহমানের নিজের জেলা বগুড়া বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম (ভিপি সাইফুল)। তার সঙ্গেও প্রথমে তারেক রহমান দেখা দিতে চাননি। তাকে ওই বিতর্কিত দুই ব্যক্তি দেখা করিয়ে দেবে বলে আশ্বস্ত করে। কিন্তু দেখা করাতে পারেননি। এ বিষয়ে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, রাজনৈতিক কোনো বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তবে তাকে অবশ্যই যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দস ও সাধারণ সম্পাদক কয়সর আহমেদের মাধ্যমে আসতে হবে। অন্য কোনো মাধ্যমে নয়। পরে ভিপি সাইফুলের পীড়াপিড়িতে ও কয়েকদিনের মধ্যে ঈদুল আজহা এসে যাওয়ায় সাইফুলকে সময় দেন তিনি। সূত্র জানায়, নিজ জেলা বগুড়া বিএনপির সভাপতিকেও যিনি সহজে দেখা দেননি, তার সঙ্গে নাকি নিয়মিত নেতাকর্মীরা সাক্ষাৎ করেন, বাংলাদেশে এমন প্রচারণা চালানো হয়। এ ধরনের প্রচারণা অবশ্যই অপপ্রচার।
ভিপি সাইফুল ছাড়াও সম্প্রতি লন্ডন গিয়েছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সারোয়ার এমপি। তার কর্মকাণ্ডে দলের হাইকমান্ড যেমন খুশি, তেমনি তারেক রহমানও খুশি বলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী নেতারা জানান। সরোয়ারের সঙ্গে তিনি দীর্ঘ বৈঠকও করেন। এছাড়া, সংস্কারপন্থি নেতা সুনামগঞ্জের নজির হোসেন তারেক রহমানের সাক্ষাৎ লাভের আশায় কিছুদিন আগে লন্ডন গিয়েও তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। দেখা করার আশায় তিনি বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় করলেও তিনি বিফল হয়েছেন।
এমন আরও অনেকেই লন্ডন গিয়ে বিএনপির ভবিষ্যৎ কর্ণধার তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতে ব্যর্থ হন বলে লন্ডন বিএনপির সূত্র জানায়।
(দ্য রিপোর্ট/টিএস/এমএইচ/সাদি/এইচএসএম/ডিসেম্বর ১০, ২০১৩)