ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : স্বনামধন্য ইতিহাসবিদ স্যার যদুনাথ সরকার ১৮৭০ সালের ১০ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সালের ১৯ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তিনিই প্রথম ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থিত জাতীয় গ্রন্থাগারে মীর্জা নাথান রচিত বাহরিস্তান-ই-গায়বী- এর পাণ্ডুলিপি খুঁজে পান। পরবর্তীতে তিনি এ বিষয়ে বিভিন্ন জার্নালে বাংলা এবং ইংরেজিতে প্রবন্ধ রচনা করেন।
যদুনাথ সরকারের জন্ম বৃহত্তর রাজশাহী জেলার আত্রাই থানার কড়চমারিয়া গ্রামে৷ তার বাবা রাজকুমার সরকার ও মা হরিসুন্দরী দেবীর ৭ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে তিনি ৫ম সন্তান। তাদের পূর্বপুরুষ ধনাঢ্য জমিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।
তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু নিজ গ্রামের স্কুলে। অধ্যয়ন করেছেন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাস করেন। সেখানে তিনি প্রথম শ্রেণীতে ষষ্ঠ স্থান অর্জন করেন। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী কলেজ থেকে ১ম বিভাগে দশম স্থান অধিকার করে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইতিহাস ও ইংরেজি সাহিত্য- এই দুটি বিষয়ে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে ৯০% নম্বর নিয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাস করেন৷ ১৮৯৭ সালে তিনি ‘প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ’ স্কলারশিপ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্বর্ণপদকসহ দশ হাজার টাকা বৃত্তি লাভ করেন৷
তার বাবা বিদ্যানুরাগী রাজকুমার সরকারের ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার ছিল। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে ছিল তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এটি যদুনাথ সরকারকে প্রভাবান্বিত করেছিল। পিতার মাধ্যমেই অল্প বয়সে তার পরিচয় হয়েছিল বাট্রার্ড রাসেলের 'Hisotry of England' নামক গ্রন্থের সাথে। বাবার মাধ্যমে তিনি প্লুটার্ক রচিত প্রাচীন গ্রীক ও রোমান নায়কদের জীবনী পড়ার সুযোগ পান। পরবর্তীতে তিনি ইতিহাস চর্চার অনুপ্রেরণা পান ভগিনী নিবেদিতার কাছ থেকে।
প্রেসিডেন্সি কলেজে ১৮৯৮ সালে তিনি প্রথম অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৮৯৯ সালে পাটনা কলেজে বদলি হন। মাঝখানে কিছুকাল ১৯১৭ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে অধ্যাপনা করেন। তার অধ্যাপনা জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটে পাটনা ও কটকে। ৪ আগস্ট ১৯২৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে মনোনীত হন। তিনিই প্রথম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভাইস-চ্যান্সেলর ছিলেন।
যদুনাথ সরকার ঐতিহাসিক গবেষণা-গ্রন্থ রচনার জন্য বাংলা, ইংরেজী, সংস্কৃত ভাষা ছাড়াও উর্দু, ফারসী, মারাঠীসহ আরও কয়েকটি ভাষা শিখেছিলেন। ঐতিহাসিক গবেষণা ছাড়াও তিনি একজন বিশিষ্ট সাহিত্য-সমালোচক ছিলেন।
তিনি ১৯২৩ সালে রয়্যাল এশিয়াটিক সোসা্ইটির সম্মানিত সদস্য হন।
যদুনাথ সরকার ২৫টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন ও ১২টি গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন। ১৯০১ সালে তার প্রথম গ্রন্থ পাঁচ খণ্ডে সমাপ্ত 'হিস্ট্রি অফ ঔরঙ্গজেব' প্রকাশিত হয়।
যদুনাথ সরকার তার প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে বিরল সম্মাননা অর্জন করেছিলেন। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধি প্রদান করেন।
(দ্য রিপোর্ট/কেএম/রা/এমডি/ডিসেম্বর ১০, ২০১৩)