উত্তর মেরুর প্রাচীন নগরে এক টুকরো বাংলাদেশ
প্লাবন ইমদাদ, ভাসা (ফিনল্যান্ড) থেকে : বাইরে শিমুল তুলার মত সাদা তুষারপাত, কনকনে ঠাণ্ডা আর ভেতরে যোজন যোজন দূর বাংলাদেশের বাংলা গানে মুখরিত অডিটোরিয়াম।বাঙালিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শেতাঙ্গিনীরাও বাংলার চিরাচরিত শাড়ি পরে আচ্ছন্ন বাংলা সংস্কৃতির মোহজালে। এমনি এক বাঙালি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আবেশ ছড়িয়ে গেল সুদূর উত্তর মেরুর দেশ ফিনল্যান্ডের এক ছোট্ট শহর ভাসায় গত ৭ ডিসেম্বর।
সুইডেন-ফিনল্যান্ডের যুগল ইতিহাস ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধ এ প্রাচীন নগরী ভাসার ৪০০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো আয়োজিত কোনো বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তাই ফিনিশদেরও গর্বের কমতি ছিল না। ফিনল্যান্ডের উত্তর পশ্চিমের শহর ভাসায় বসবাসরত বাংলাদেশির সংখ্যা মাত্র ৩৫ জন। এ আয়োজনকে সফল করতে ছুটে আসে পাশের শহর পিয়েতেসারির বাঙালি আর রাজধানী হেলসিনকিসহ দূরের শহরের বাংলাদেশিরা। তারা ছুটে আসেন প্রাণের টানে, গানের বানে। আর এতে কলকাতার এক বাঙালি দম্পতিও তাদের ধ্রুপদী সংগীত নিয়ে যোগ দেন এ প্রাণের মিলনমেলায়।
প্রায় চার মাসের অক্লান্ত পরিশ্রম আর সকল বাঙালির আন্তরিক সহযোগিতায় নিজেদের চমৎকার আয়োজন ও পরিবেশনায় অনুষ্ঠানটি মুখরিত হয়ে উঠে হাসন রাজা, লালন সাঁই, শাহ আব্দুল করিমের গানে। বেজে ওঠে গিটারের ছয় তারে আর্টসেল, জেমস আর অঞ্জন দত্তের অদ্ভুত সব গান। যে জন প্রেমের ভাব জানে না, বন্ধে মায়া লাগাইছে-এর মতো গানগুলো যেন বারবার হাহাকার তুলে প্রতিটি বাঙালির প্রাণে।
শুধু গান নয় আরও পরিবেশিত হয় নবদম্পতির মান অভিমান নিয়ে নিজেদের রচিত একটি নাটিকা 'ফুটবল কোন্দল'। চিরায়ত বাঙালি খাবারের স্বাদে, গন্ধে বিদেশি অতিথিরাও হয়ে ওঠেন রসনাবিলাসী। সব শেষে মৃদু আলোয় পিয়ানোতে গলা ঢেলে দিয়ে সবাই দাঁড়িয়ে সমস্বরে গেয়ে ওঠেন, ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা। উত্তর মেরুর এই ছোট্ট শহরে তখন যেন প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে সুরের রথে নেমে আসে সবুজ শ্যামলা বাংলাদেশ। ৪০০ বছরের ইতিহাসের শূন্যতা ঘুচিয়ে প্রাচীন শহরের বুকে আঁকা হয় লাল সবুজের পতাকা, লেখা হয় প্রিয় নাম, বাংলাদেশ!
(দ্য রিপোর্ট/পিই/রা/এইচএসএম/ডিসেম্বর ১০, ২০১৩)