দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : আব্দুল কাদের মোল্লা, কাদের মোল্লা নামেই বেশি পরিচিত। ১৯৪৮ সালে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার আমিরাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবার নাম মরহুম সানাউল্লাহ মোল্লা। তিনি থাকতেন রাজধানীর বড় মগবাজারের ৪৯৩ গ্রিন ভ্যালি অ্যাপার্টমেন্টে।

১৯৬১ সালে আমিরাবাদ ফজলুল হক ইনস্টিটিউটে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় কাদের মোল্লা যোগ দেন ছাত্র ইউনিয়নে। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ১৯৬৬ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে বিএসসিতে ভর্তি পর্যন্ত তিনি ছাত্র ইউনিয়নের আমিরাবাদ ফজলুল হক ইনস্টিটিউটের নেতা ছিলেন। ছাত্র ইউনিয়ন ছেড়ে যোগ দেন জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘে। পরবর্তীতে তিনি রাজেন্দ্র কলেজ শাখা ছাত্রসংঘের সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৬৮ সালে তিনি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি ইসলামী ছাত্রসংঘের শহীদুল্লাহ হল শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত নেতারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেন। কারণ তারা বিশ্বাস করতেন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশকে ভাগ করে আলাদা করলে এটি ইসলামের বিরুদ্ধে যাবে। সুতরাং ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা হিসেবে কাদের মোল্লা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আধাসামরিক বাহিনী আলবদরে যোগ দেন।

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিহত হওয়ার পর জিয়াউর রহমান সরকার জামায়াতকে পুনরায় রাজনীতি করার অনুমতি প্রদান করে। অন্যান্য জামায়াত নেতার মতো আব্দুল কাদের মোল্লাও সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করতে থাকেন। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কাদের মোল্লা শুধু রাজনীতি নয়, সাংবাদিকতা পেশায়ও জড়িত ছিলেন।

তিনি দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যসহ ১৯৮২-৮৩ দুই মেয়াদে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতিও ছিলেন কাদের মোল্লা।

২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কাদের মোল্লাসহ কয়েকজন জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। ২০০৮ সালে তার বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় আরও একটি মামলা হয়। গত ২০১০ সালের ১৩ জুলাই হাইকোর্ট এলাকা থেকে কাদের মোল্লাকে পল্লবী থানা এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। এরপর শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মুখে আইন সংশোধনের পর সুপ্রিমকোর্টে আপীল দায়ের করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বেঞ্চ কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/সাদি/এনডিএস/ডিসেম্বর ১০,২০১৩)