দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : অবশেষে চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে প্রধান দুই দলের মধ্যে বহুল কাঙ্ক্ষিত সংলাপ শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে বৈঠক হয়েছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ের এ বৈঠকের কথা বিএনপিও স্বীকার করেছে।

আগামী সংসদীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরাজমান অনিশ্চয়তা নিষ্পত্তির জন্য জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে এ উদ্যোগে নেওয়ার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানো হয়।

রাজধানীর গুলশান-১ এলাকার রোড নম্বর ১৩৯, ৪/এ বাড়িতে বহুল আলোচিত এ বৈঠকটি হয়। বাড়িটি বাংলাদেশে দায়িত্বরত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি নীল ওয়াকারের বাড়ি। বৈঠকে সংকট নিরসনে সফররত জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর উপস্থিতিতে অংশ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান ও ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। সরকারি দলের মহাসচিব সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু ও গওহর রিজভী।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বৈঠক বিষয়ে বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সংকট সমাধানে আলোচনার সূত্রপাত ঘটেছে। তবে এখনই মন্তব্য করার সময় হয়নি।’

মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘অত্যন্ত সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে দুই ঘণ্টা বৈঠক হয়েছে। আলোচনা চলছে, আলোচনা অব্যাহত থাকবে। শিগগিরই আবারও আলোচনায় বসব। তবে আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে এখনই বলার সময় হয়নি।’

এদিকে বিকেলে সোনারগাঁও হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তরানকো বলেন, ‘সংকট নিরসনে প্রধান দুই দল সংলাপে রাজি হয়েছে। এ বিষয়ে অগ্রগতি সন্তোষজনক।’

দুই দলের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের ওই আকাঙ্ক্ষিত ও বহুল আলোচিত বৈঠকটির ব্যাপারে দুই পক্ষই অত্যন্ত গোপনীয়তার আশ্রয় নেয়। মঙ্গলবার দুপুরের শুরু থেকেই রাজধানীতে বিশেষ করে গণমাধ্যমে রটে যায় অবশেষে দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে বৈঠক হচ্ছে। ভেনু হিসেবে জানা যায়, রাজধানীর বারিধারার ৭ নম্বর রোডের ২৮ নম্বরের ড্রিম স্টার নামক একটি বাড়ির কথা। ডুপ্লেক্স ওই বাড়িটির মালিক হচ্ছেন জাতীয় পার্টির মরহুম নেতা নাজিউর রহমান মঞ্জু।

বাড়িতে কেউ থাকেন না। সেখানে বিদেশি একটি সংস্থার উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বসবাস করেন।

এদিকে বৈঠকের সংবাদ শুনে দ্রুত সেখানে জড়ো হতে থাকেন দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্র, অনলাইন নিউজ এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সংবাদকর্মীরা। জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ও পুলিশ। তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকেন কখন বৈঠক শেষে বের হয়ে আসবেন নেতারা এবং কথা বলবেন সংবাদ মাধ্যমে। তবে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও সাংবাদিকদের মনোবাসনা পূরণ হয়নি। বৈঠক নিয়ে দুই দলের পক্ষ থেকেই নেওয়া হয় কঠোর গোপনীয়তা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বারিধারা নয়, বৈঠকের ভেন্যু গুলশান-১ নম্বর এলাকার ১৩৯ নম্বর রোডের ৪/এ এর বাড়িটি। সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলের কয়েক সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সংলাপের উদ্যাক্তা অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। দুপুর ২টা ২০ মিনিটে শুরু হয়ে বৈঠক চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

জানা যায়, বৈঠক শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য নেতারা চলে যান দলের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে। মির্জা ফখরুল ওই কার্যালয়ের নিচ তলায় প্রেস উইংয়ের একটি কক্ষে অবস্থান করেন। সে সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে সংলাপ প্রশ্নে নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ‘আপনাদের মতো আমিও সংবাদ মাধ্যমেই জেনেছি যে, দুই দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না।’

কিছুক্ষণ পর দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে আসেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। তবে তিনি কার্যালয়ে প্রবেশ করেননি। কয়েক মিনিট গাড়িতে অপেক্ষা করে তিনি চলে যান।

এর আগে সকাল থেকে হোটেলে কাটালেও দুপুরেই হঠাৎ হোটেল থেকে বের হন তারানকো। এ সময় তিনি গণমাধ্যমকে এড়িয়ে সোজা চলে যান বারিধারার ওই বাড়িতে।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার বিষয়ে বৈঠকের উভয় পক্ষ একমতে পৌঁছেছে। বৈঠক আরও চলবে।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে তারানকোর নেতৃত্বে জাতিসংঘের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসেন। সোমবার পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, নির্বাচন কমিশনার এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যু নিয়ে দেশের প্রধান দুই দলের অনঢ় অবস্থান ও বর্তমান সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক সহকারী মহাসচিবের সফরকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/টিএস/এমএইচ/এমসি/ডিসেম্বর ১০, ২০১৩)