কাদের মোল্লার ফাঁসির ঘোষণায় দেশজুড়ে ‘তাণ্ডব’
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে দেশজুড়ে ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর, সড়ক অবরোধ, থানা আক্রমণের চেষ্টাসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটেছে। জামায়াত-শিবিরের নেতৃত্বে এসব তাণ্ডব চালানো হয় বলে দ্য রিপোর্টের সংবাদদাতারা জানান।
চট্টগ্রাম :
নগরীর পাঁচলাইশ থানা আক্রমণের চেষ্টা চালায় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। তবে পুলিশের প্রতিরোধের মুখে তারা ব্যর্থ হয়। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালায়। নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) হারুনু অর রশীদ জানান, জামাত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা মিছিল নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় থানা আক্রমণের চেষ্টা করেছিল। আমরা তাদের প্রতিরোধ করেছি। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে।
এদিকে সাতকানিয়া উপজেলার হাসমতের দোকান এলাকায় একটি মাইক্রোবাসে আগুন দিয়েছে জামায়াত শিবিরকর্মীরা। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
সন্ধ্যার পর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা।
কুষ্টিয়া :
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুষ্টিয়া সাদ্দাম বাজার এলাকায় ছাত্রলীগের অফিস লক্ষ্য করে কয়েকটি ককটেল ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। এর কিছুক্ষণ পর তারা ওই অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে অফিস পুড়ে সম্পূর্ণরূপে ভস্মীভূত হয়ে যায়। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আলী মুর্তজা খসরু বলেন, জামায়াত শিবিরের ক্যাডাররা এ নাশকতা চালিয়েছে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ বেলায়েত হোসেন বলেন, দুর্বৃত্তরা ছাত্রলীগের অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ককটেলের খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।
খুলনা :
রাত ৮টার মধ্যে মহানগরীর সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। নগরীতে থমথমে পরস্থিতি বিরাজ করছে এবং কয়েকটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ এবং গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলশি-জামায়াতকর্মীদের মধ্যে মৌলভীপাড়ায় সংর্ঘষ হয়েছে। সংঘর্ষে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দাবি করেছে জামায়াত।
ফরিদপুর :
রাত ৯টার দিকে শহরের জনতা ব্যাংকের মোড়ে একটি ইট বোঝাই ট্রাকে আগুন দেয় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় আছে বলে জানিয়েছে কোতোয়ালি থানার ওসি সৈয়দ মহসিনুল হক।
তবে কাদের মোল্লার নিজ এলাকা সদরপুরে এখনো কোন অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি।
রংপুর :
মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ির পাঁচ কিলোমিটার এলাকার সড়কে গাছ কেটে ব্যারিকেড দিয়ে অবস্থান নেয় শত শত নারী-পুরুষ। এ সময় তাদের হাতে দাঁ-বটি ও দেশিয় অস্ত্র দেখা গেছে। শহরে থম থমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৬ প্লাটুন বিজিব মোতায়েন করা হয়েছে।
চাঁদপুর :
রাত ৮টার পর থেকে চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে জামাত-শিবিরকর্মীরা ভাঙচুর শুরু করে। একদল শিবিরকর্মী চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের জগতপুর এলাকায় রাত সাড়ে ৮টায় দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। এ সময় ৮/১০টি গাড়িও ভাংচুর করে তারা।
জানা যায়, জামায়াত-শিবিরের লোকজন জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে আছে। ফাঁসি কার্যকর হলে আরো ব্যাপক তাণ্ডব চালাতে পারে তারা। জেলায় পুলিশ ও বিজিবি টহল জোরদার করা হয়েছে।
নাটোর :
মঙ্গলবার রাত ৯টার পর জামায়াতের নেতাকর্মীরা শহরের বড়হরিশপুর বাইপাস এলাকার মহাসড়কে গাছের গুড়ি, ইট-পাটকেল ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। নাটোর-ঢাকা এবং নাটোর-পাবনা মহসড়কের আহম্মদপুর, হয়বতপুর, ধানাইদহ, নয়াবাজার এলাকায় রাস্তা বন্দ করে দেওয়া হয়েছে। এসব এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়েনি।
নাশকতা এড়াতে শহরে রাত সাড়ে ৮টার পর থেকে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি র্যাব ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জাফর উল্লাহ বিজিবি মোতায়েনের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, শহরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
কক্সবাজার :
মঙ্গলবার রাত ৮টার পর থেকে কক্সবাজার শহরের পাঁচটি স্থানে, উখিয়ার তিনটি স্থানে ও চকরিয়ার দুটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। এসময় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এখন পুরো এলাকায় বিজিবি টহল দিচ্ছে।
পাবনা :
সন্ধ্যার পর গাছ ফেলে মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। এছাড়া পিকেটারদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় মা-মেয়ে আহত হয়েছেন। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একটি অটোরিকশা। এদিকে, নাশকতা ঠেকাতে পাবনায় তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা :
জেলার ঝাউডাঙ্গায় মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। নাশকতা এড়াতে সাতক্ষীরায় ২০ প্লাটুন পুলিশ-বিজিবি-র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ সুপার মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, সাতক্ষীরার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সদর উপজেলার বলাডাঙ্গা গ্রামের ফজর আলীর ছেলে আওয়ামী লীগের কর্মী আব্দুল হামিদকে আহত ও সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে পাঁচরকি এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা :
নাশকতার আশঙ্কায় পশ্চিমাঞ্চলীয় রেল রুটে রেডএলার্ট জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে সন্ধ্যা থেকে এই রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলো বিভিন্ন স্টেশনে আটকে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর জামায়াত নেতার রায় কার্যকর করা হচ্ছে- এমন খবরের পরপরই খুলনা থেকে রাজশাহীগামী সাগরদাড়ি এক্সপ্রেস ট্রেনটি চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে আটকে দেয় রেল কর্তৃপক্ষ।
টাঙ্গাইল :
রাত ৮টায় শহরের রেজিস্ট্রি পাড়া থেকে মিছিল বের হয়ে পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ইট-পাটকেল দিয়ে ১০-১২টি সিএনজি-অটোরিকশা ভাঙচুর করে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। এসময় পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে একটি সিএনজি পুড়িয়ে দেয় তারা। পরে পুলিশ এসে সেখান থেকে দুজনকে আটক করে। টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
(দ্য রিপোর্ট/এমসি/ডিসেম্বর ১০, ২০১৩)