ফরিদপুর সংবাদদাতা : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার রায় স্থগিত হওয়ায় পাল্টে যায় ফরিদপুরের দৃশ্যপট।

ফাঁসি কার্যকর করার রায় স্থগিত হওয়ার খবরে হতাশা প্রকাশ করে ফরিদপুর জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু ফয়েজ শাহ্ নেওয়াজ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ সংবাদ দেশবাসীর জন্য অত্যন্ত হতাশার। কারণ দেশবাসী জানে যুদ্ধাপরাধীরা খুবই শক্তিশালী। দেশ এবং দেশের বাহিরে রয়েছে তাদের বিশাল নেটওয়ার্ক। তারা বরাবরই যুদ্ধপরাধীদের বাঁচাতে তৎপর রয়েছে। সবসময়ই অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও দেশের আইন এবং বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। তারপরও আমাদের আশংকা থেকেই যায়, যতক্ষণ পর্যন্ত রায় কার্যকর না হয়। আমরা আশা করি বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ প্রধান সব অপতৎপরতাকে অতিক্রম করে জাতীর দীর্ঘদিনের আশা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করতে সক্ষম হবেন।

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আজকের এই রায়টি ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। ৪২ বছর পর আমরা জাতির কলংক মোচনের কাজটি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম। রায় কার্যকর করার ঠিক আগমুহূর্তে তা স্থগিত হওয়ার সংবাদে হতাশ হয়ে পড়েছি। আমরা এও জানি এই অপরাধীদের পেছনে রয়েছে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। যারা এই যুদ্ধপরাধীদের কাছে টেনে নিয়েছিল, জাতীয় সংসদে তাদের আসন দিয়েছিল, তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা উঠিয়েছিল। রায় কার্যকর করার ঘোষণায় আমরা গর্ববোধ করছিলাম। কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু হচ্ছে আমাদের জেলা থেকে। কারণ আব্দুল কাদের মোল্লার বাড়ি আমাদের জেলায়।

এদিকে রায় স্থগিতের সংবাদে ফরিদপুর জেলা জামায়াতের আমীর সামসুল ইসলাম আল বরাটি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বর্তমান সরকার দেশের আইনকে প্রভাবিত করে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক কারণে নিরাপরাধ ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ডের মতো জঘন্য কাজ করতে যাচ্ছে। এ রায় সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। নিরপেক্ষভাবে বিচার কাজ পরিচালিত হলে আব্দুল কাদের মোল্লার একদিনের জন্যও জেল হবে না। আমরা এ রায়কে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।

কাদের মোল্লার ছোট ভাই ভাষানচর ইউপি পরিষদের চেয়ারম্যান মোল্যা মাঈনদ্দিন আহম্মেদ জানান, সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে তাকে এ শাস্তি দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের কি এদেশে কথা বলার কোনো অধিকার নেই?

পরিবারে গতকাল সারাদিনই চলছে দোয়া মিলাদ মাহফিলসহ ধর্মীয় গ্রন্থ পড়ে মোল্লার জন্যে দোয়া কামনা করতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে কাদের মোল্লার মৃত্যুর পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে তার নিজ এলাকায় কোনো মিছিল-সমাবেশ করা হয়নি। সদরপুর উপজেলা শহরের বিভিন্ন মোড়ে পুলিশের বাড়তি উপস্থিতি দেখা যায়। রায় স্থগিতের সংবাদে ফরিদপুরে কোন পক্ষের কোন কর্মসুচি দেখা যায় নাই। তবে পুলিশ প্রশাসন রয়েছে সর্বচ্চো সতর্কতা অবস্থায়।

(দ্য রিপোর্ট/এসএইচ/জেএম/ডিসেম্বর ১১, ২০১৩)