সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার জন্য তৈরি হচ্ছে ২০টি গবেষণাপত্র
জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : আয় ও আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তৈরি হচ্ছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। চলমান ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা শেষ হচ্ছে আগামী ২০১৫ সালে।
এ প্রেক্ষিতে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরির কাজ শুরু করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা তৈরির জন্য ২০টি অনুসন্ধানী গবেষণাপত্র তৈরির কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে টার্ম অব রেফারেন্স তৈরির কাজও শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে জিইডির সদস্য ড. শামসুল আলম মঙ্গলবার দ্য রিপোর্টকে জানান, আগামী জুনের মধ্যেই ২০টি গবেষণাপত্র তৈরি শেষ হবে। এটি হলে পরবর্তী প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে যাবে। কেননা এই অনুসন্ধানী গবেষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করেই তৈরি হবে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। নতুন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরির পাশাপাশি চলমান ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অগ্রগতিও মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হচ্ছে নতুন পরিকল্পনা তৈরিতে।
জিইডি সূত্র জানায়, সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নামে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এ পরিকল্পনাটি মূলত দুটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হচ্ছে। একটি হচ্ছে ষষ্ঠ (যা চলমান) ও অপরটি হবে সপ্তম (যেটি তৈরির প্রক্রিয়া চলছে) পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা।
২০২০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরে তৈরি হতে যাওয়া এ পরিকল্পনায় যেসব বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তা হলো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি শক্তি এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন। এ বিষয়ে একটি সার্বিক নীতিমালা (কনসেপ্ট পেপার) তৈরির কাজ শেষে সম্প্রতি অর্থনীতিবিদ প্যানেলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরির জন্য কাজ করছে একটি জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি। ২০০৯ সালের ২৬ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরির জন্য পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগকে (জাতীয় দারিদ্র্য ফোকাল পয়েন্ট) প্রয়োজনীয় উপদেশ ও পরামর্শ প্রদানের জন্য উচ্চ পর্যায়ের এ স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়।
৩৭ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ারভাইস মার্শাল (অব.) একে খন্দকার। সদস্য হিসেবে রয়েছেন- অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বাংলাদেশ বিনিযোগ বোর্ডের চেয়ারম্যান, মন্ত্রী পরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সিনিয়র সচিব বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, সচিব পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং যেসব মন্ত্রনালয় ও বিভাগের সচিবরা এ কমিটির সদস্য রয়েছেন সেগুলো হচ্ছে- ভূমি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দূর্যোগ ব্যবস্থাপণা ও ত্রান মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, খাদ্য মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা বিভাগ, বিদ্যুত বিভাগ, সড়ক বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও সদস্য সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ।
অন্যদিকে, বাস্তবায়নাধীন (চলমান) দীর্ঘমেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় (রুপকল্প-২০২১) জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোড় দেওয়া হবে। কয়লা থেকে জ্বালানি শক্তি মাত্র ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। যা ২০২১ সালের মধ্যে ৫৩ শতাংশে উন্নীত করা হবে। বিদ্যুত উৎপাদনে বর্তমানে গ্যাসের ব্যবহার ৮৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে ও এলপিজির ব্যবহার জনপ্রিয় করা হবে।
এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০১৩ সালের মধ্যে ৮ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন, ২০১৫ সালের মধ্যে ১৫ হাজার ৩৫৭ মেগাওয়াট ও ২০২১ সালের মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। পাশাপাশি ২০২১ সালের মধ্যে সকল মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে রুপকল্প ২০২১-এর প্রেক্ষিতে বিশটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে ৫ বছরের জন্য উন্নয়নের দলিল ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন সহযোগীদের ৯৬ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে।
ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রধান লক্ষ্যগুলো মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ৫ বছরে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়া, ৯২ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, বিদ্যুত উৎপাদন ১৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা, মুদ্রাস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং মোট দেশজ বিনিয়োগ (জিডিপির অংশ) ৩২ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এমএইচও/ডিসেম্বর ১০, ২০১৩)