দ্য রিপোর্ট প্রতিবেক : সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, বর্তমানে গণতান্ত্রিক দুর্বার আন্দোলন শহর-বন্দর-নগর পেরিয়ে গ্রাম-গ্রামান্তরে প্রতিটি জনপদে বিস্তৃতি লাভ করেছে। হাজার বছরের বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসকে অতিক্রম করে এক নব-অধ্যায়ের সুচনা হয়েছে।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সময়ের পরিক্রমায় প্রয়োজনের নিরীখে তৃণমূল থেকে যেভাবে আন্দোলনের নেতৃত্বের বিকাশ ঘটছে তাতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ উচ্চ পর্যায়ের সকল নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হলেও আন্দোলনের এই দাবানল প্রশমিত করার শক্তি স্বৈরশাসকের নেই। পেটোয়া বাহিনী দিয়ে কোনদিনই এই গণবিক্ষোভ দমন করা সম্ভব হবে না। আমরা সরকারের উদ্দেশে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই-জনতার তীব্র স্রোতের বিপরীতে চলমান বাকশালী নৌকা দুর্ভেদ্য গণপ্রতিরোধের ভারে নিমজ্জিত হবেই হবে ইনশাল্লাহ।’

গুলশানের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ১৮ দলের ডাকা ১৪৪ ঘণ্টার অবরোধের পঞ্চম দিনে সারাদেশের চিত্র তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘জাতি এখন চরম ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। রাষ্ট্রের শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং আইন বিভাগ এক ব্যক্তির হাতে বন্দী। ফলে রাষ্ট্রীয় নৈরাজ্য অনিবার্য হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীন সরকার দাম্ভিক আচরণ করছে। সরকার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের এই নিষ্ঠুর অত্যাচার নির্যাতন মোকাবেলা করে কঠিন পথ অতিক্রমের মধ্য দিয়ে গণমানুষের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে চূড়ান্ত বিজয়ে রূপ দিতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।’

দেশের জনগণ এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগ চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণ-আন্দোলনের তীব্র স্রোতে স্বৈরশাসনের পতন হতে বাধ্য। আমরা এখনো আশা করি, গণদাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবিলম্বে পদত্যাগ করবেন। নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নেবেন।

সারা বাংলার মানুষ আজ দৃশ্যত: কারাগারে বন্দী। দেশটা পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রের সকল অঙ্গ সরকারের সেবাদাসের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং রাষ্ট্রের ভারসাম্যহীনতা, নৈরাজ্যের ফলে সৃষ্ট যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী থাকবে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবারো আহ্বান জানাই-এখনও সময় আছে, দেশ-জাতি ও জনগণের স্বার্থে এই আত্মঘাতী পথ পরিহার করুন। প্রহসনের নির্বাচনী তফসিল বাতিলের ব্যবস্থা নিন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নিন।’

নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সরকারের তল্পিবাহক না হয়ে একতরফা প্রহসনের নির্বাচন অবিলম্বে স্থগিত করুন। অন্যথায় আপনাদের ব্যর্থতার কালো তিলক মাথায় নিয়ে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে একদিন।

তিনি বলেন, আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সবার অংশগ্রহণমূলক বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাস করি। আমরা বিশ্বাস করি নির্বাচনই ক্ষমতা হস্তান্তরের একমাত্র গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হোক তা বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া বরাবরই চেয়েছেন। দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ, বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক সমাজসহ শতকরা নব্বই ভাগ মানুষই নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকার বিরোধী দলবিহীন একতরফা নির্বাচনে সংকল্পবদ্ধ, কারণ তাঁর আমলের দুর্নীতি, দুঃশাসন, দলীয়করণ, দমন-পীড়নের কারণে জনগণ যে তাদের প্রত্যাখ্যান করবে সেটা তারা জানে। যেকোনো নিরপেক্ষ বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চরম ভরাডুবি হবে এটাই আজকের বাস্তবতা। সরকার এই বাস্তবতাকে গণতান্ত্রিকভাবে মোকাবেলা করতে ভয় পায়।

সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম গত কয়েক দিনে ৩০ জনকে গুম করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

(দ্য রিপোর্ট/টিএস-এমএইচ/নূরু/এইচএসএম/ডিসেম্বর ১১, ২০১৩)