১০০ কেজি গাঁজা খেয়েছে ইঁদুর!
সুমন মুশাফির, কলকাতা : আটক গাঁজা আদালতে পেশ না করে 'গাঁজা উধাও'-এর কারণ হিসেবে বিচারককে রিপোর্ট পেশ করছেন পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকল থানা৷ রিপোর্টে বলা হয়েছে, থানার মালখানায় প্রচুর ইঁদুর আসে৷ তারাই খেয়ে সাবাড় করেছে ১০০ কেজি গাঁজা৷
জিআরপির ডিআইজি স্বপন মাইতি ইঁদুরের গাঁজা খাওয়ার রহস্য ভেদের তদন্তের ভার পেয়ে বলেন, 'কী অভিযোগ বলা যাবে না৷ তবে গুরুতর অভিযোগ, সেটুকু বলতে পারি৷'
পুলিশ সূত্র থেকে জানা যায়, ২০১১ সালে যখন ডোমকল থানার আইসি সন্দীপ মালের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, বাজেয়াপ্ত হওয়া বিপুল পরিমাণ গাঁজা তিনি নাকি গোপনে বিক্রি করে দিচ্ছেন থানার মালখানা থেকেই৷ এরপর নড়েচড়ে বসেন পুলিশ কর্তারা৷
মুর্শিদাবাদের তদানীন্তন পুলিশ সুপার ভরতলাল মিনা আচমকাই একদিন অচেনা গলার একটি ফোন পান৷ তাকে জানানো হয়, সম্প্রতি ডোমকল থানার মালখানা থেকে বিক্রি করা হয়েছে ১৫০ কেজি গাঁজা৷ ভরতলাল একে মোটেই গাঁজাখুরি গপ্পো বলে উড়িয়ে দিতে পারেননি!
ডোমকলের তদানীন্তন এসডিপিও সুবীর চট্টোপাধ্যায়কে (অধুনা এসডিপিও, বারাসত) বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ পাঠান৷ সুবীরের নেতৃত্বে তদন্তকারী দল ডোমকল থানায় এসে গত পাঁচবছরে কত গাঁজা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তার হিসেব নেন রেকর্ড বুক থেকে৷ তার পর দাড়িপাল্লা-বাটখারা এনে শুরু হয় মালখানায় গাঁজা-মাপন!
মাপজোক শেষে পুলিশ কর্তাদের চোখ কপালে৷ রেকর্ড বুকের হিসেব থেকে অন্তত ১০০ কেজি গাঁজা কম! সঙ্গে সঙ্গে শোকজ করা হয় আইসি সন্দীপ মালকে৷ তার জবাবেই নজিরবিহীন একখানি রিপোর্ট জমা দেন সন্দীপ৷
তিনি জানান, 'মালখানা ঘরে প্রচুর ইঁদুর আসে৷ তারাই খেয়ে সাবাড় করেছে ১০০ কেজি গাঁজা৷' রিপোর্ট দেখে তদন্তকারী অফিসারেরা হাসবেন না কাঁদবেন বুঝতে পারেননি৷ এর পরেই পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ থেকে রেল পুলিশে বদলি হন সন্দীপ মাল৷ কাজেই তদন্তভার নিতে হয় জিআরপি-র ডিআইজিকে৷ সন্দীপবাবু অবশ্য এ ব্যাপারে কোনো কথাই বলতে চান না৷ ফোনে বিষয়টি শুনেই তিনি, 'আমি ১১ তারিখ আসছি না, তদন্তের ব্যাপারে কিছু জানি না' ৷বর্তমান পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবিরেরও মুখে কুলুপ৷ বললেন, 'ঘটনাটা শুনেছি৷ কিন্তু এ সব বিতর্কিত বিষয় নিয়ে মুখ খুলব না৷'
তবে স্থানীয় বাসিন্দারা এ ঘটনা শুনে মুচকি হাসছেন৷ কেউ বলছেন, 'এটা নতুন কিছু নয়৷' এর আগে রানিনগর থানার মালখানার বাজেয়াপ্ত ফেনসিডিলের বোতল থেকে সিরাপ বিক্রি করে গুড়জল ভরে রাখার অভিযোগে ওসি পবিত্র মিত্র মুস্তাফিকে বছর দু'য়েক জেল খাটতে হয়েছিল৷ তবে দোষ প্রমাণ না-হওয়ায় বেকসুর খালাস পান পবিত্র মিত্র৷
(দ্য রিপোর্ট/এসএম/নূরু/এইচএসএম/ডিসেম্বর ১১, ২০১৩)