কর্মকর্তাদের অন্তর্দ্বন্দ্বের বলি হকি
ওবায়দুল চঞ্চল, দ্য রিপোর্ট : ‘নির্বাচনে যে পক্ষ হেরে যাবে সে পক্ষ নির্বাচিতদের ভালোভাবে কাজ করতে দেবে না, এটাই এখন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ কথাগুলো বলেছেন বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খাজা রহমতউল্লাহ। তার কথাই পরিষ্কার ফুটে ওঠে দেশে হকির বর্তমান অবস্থা।
মোহামেডান, মেরিনার্স, ওয়ারী ও বাংলাদেশ স্পোর্টিং ক্লাবকে বাদ দিয়ে এবার শুরু হতে যাচ্ছে ঘরোয়া হকির সর্বোচ্চ আসর প্রিমিয়ার লিগ! ৪টি ক্লাব ফেডারেশনের বর্তমান কমিটির অধীনে কোনো কর্মকাণ্ডেই অংশ নেবে না বলে এমন সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সমস্যা সামাধানে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুর দারস্থ হয়েছিলেন সাবেক খেলোয়াড় ও ৪টি ক্লাবের কর্মকর্তারা। তাতেও সমস্যার জট খোলেনি। বর্তমান নির্বাচিত কমিটি ওই ৪টি ক্লাবের জন্য ২টি সহ-সভাপতি পদ ছেড়ে দেওয়ারও ঘোষাণা দিয়েছে। কিন্তু সেই প্রস্তাবেও রাজি হয়নি ৪টি ক্লাব। এমন অবস্থায় প্রিমিয়ার লিগ কতটা সফল হবে এটাই এখন দেখার বিষয়। তবে অনেকেই মনে করছেন, হকির অন্যতম শক্তিশালী ২টি দল মোহামেডান ও মেরিনার্সের অনুপস্থিতি লিগের জৌলুস কমিয়ে দেবে।
এ বিষয়ে ফেডারেশনের সাধারণ সাম্পাদক খাজা রহমতউল্লাহ বলেছেন, ‘খেলা বন্ধ রাখার চেয়ে খেলাটা চালিয়ে যাওয়াই আমার কাছে বড় মনে হয়েছে। খেলা বন্ধ রাখলে তো কোনো লাভ নেই। খেলোয়াড়দের একমাত্র আয়ের উৎসই লিগ। তাই আমরা খেলোয়াড়দের কথা আগে ভেবেছি।’
রহমতউল্লাহ আরও বলেছেন, ‘আবাহনী-মোহামেডান ঐতিহ্যবাহী দল। এটা কোনো ব্যক্তি বিশেষের জন্য নয়। কেউ চাইলেই ক্লাবগুলোকে বসিয়ে রাখতে পারে না। এতে খেলোয়াড়দের পাশাপাশি দলগুলোর ভক্তরাও বঞ্চিত হয়।’ আগের কমিটির আমলে আপনারাও তো একই রকম করেছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রহমতউল্লাহ বলেন, ‘জামিল সাহেবের আমলে আমরা খেলা বন্ধ করিনি। আমরা সাড়ে ৩ বছর অপেক্ষা করেছি। তারাও অপেক্ষা করুক। আমি খেলার লোক। সাবেক ১৪জন খেলোয়াড় আমাদের বর্তমান কমিটিতের আছে। আমি নিজেও খেলোয়াড় ছিলাম।’
এদিকে মোহামেডানের সাবেক হকি কমিটির সম্পাদক সাজেদ আকিল আহমেদ আদেল বলেছেন, ‘বর্তমান কমিটির সমস্য সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই। ৪-৫টি ক্লাব কেন খেলছে না; তা দেখা দরকার। তারা যে দুইটা সভাপতি পদ দেওয়ার কথা আমাদের বলছে এটা আমাদের কাছে অসম্মানজনক। বর্তমান কমিটির সঙ্গে যোগ দেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই উঠে না।’
সমস্যার এখানেই শেষ নয়। জানা গেছে দলবদলের আগে বেশ কিছু খেলোয়াড়ের সঙ্গে আগাম চুক্তি করে রেখেছিল মোহামেডান। তাই ওই খেলোয়াড়দের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে চিন্তা করছেন না খাজা রহমতউল্লাহ। তিনি বলেছেন, ‘টোকেন যার খেলোয়াড় তার। মোহামেডান তো দলবদলে অংশই নেয়নি। তারা যদি কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে চুক্তিও করে থাকে এতে কোনো সমস্যা হবে না। ওই খেলোয়াড়রা এখন উন্মুক্ত। যদি কোনো খেলোয়াড় অগ্রিম টাকা নিয়ে থাকে এটাও আমাদের দেখার বিষয় না।’
এশিয়া কাপে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দেশসেরা ফরোয়ার্ড রাসেল মাহমুদ জিমি ও গোলরক্ষক জাহিদসহ জাতীয় দলের ৪ হকি খেলোয়াড়কে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। এ নিয়েও জল কম ঘোলা হয়নি। তবে খেলোয়াড়দের এখনও পর্যন্ত আপিল করার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক আনভির আদিল খান।
তিনি বলেছেন, ‘জাতীয় দলে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তো শাস্তি পেতেই পারে। তাদের আপিলের সুযোগ ছিল, এখনও আছে। তারা আপিল না করে বাইরে থেকে নিজেদের নির্দোষ দাবি করলে তো হবে না। সব কিছুরই একটা নিয়ম রয়েছে। নিয়মের মধ্যে আসতে হবে।’
(দ্য রিপোর্ট/ওআইসি/সিজি/শাহ/এএস/ডিসেম্বর ১২, ২০১৩)