রাজনৈতিক অস্থিরতায় জেইসি থেকে সরে গেল চীন
জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট : বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠকে বসতে রাজি হয়নি চীন। প্রস্তাব দেওয়ার দীর্ঘ ছয় মাস পর উত্তর দিয়েছে দেশটি। কোন কারণ না জানিয়েই রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে জেইসি বৈঠক করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে চায়না ডেস্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এক কর্মকর্তা দ্য রিপোর্টকে জানান, চীনে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে সম্প্রতি জানিয়েছে তারা বৈঠকে বসতে রাজি নয়। এর কোন কারণ জানা গেছে কি-না এ ধরনের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চীন স্পষ্ট করে কোন কারণ জানায়নি। তবে শুধু জানিয়েছে তারা ব্যস্ত আছে। তাই এ মুহূর্তে জেইসি সম্ভব নয়।
তবে এ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) যুগ্ম সচিব এশিয়া ডেস্কের প্রধান আসিফ-উজ-জামান। তিনি বৃহস্পতিবার দ্য রিপোর্টকে জানান, আসলে চীন জেইসি বাতিল করে দেয়নি। তারা বলেছে, এখন এ বৈঠক করা সম্ভব নয়। আগামীতে সুবিধাজনক সময়ে তারিখ জানানো হবে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এমনটি হয়েছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরাসরি সেটিও বলা যাবে না।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ২৮ জুলাই সর্বশেষ চীনের বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ-চীন যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের ১২তম বৈঠক। এর পর দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও আর কোন বৈঠক হয়নি। অবশেষে গত জুন মাসে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ঢাকায় জেইসি বৈঠকের প্রস্তাব পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছিল ২৬ অথবা ২৭ সেপ্টেম্বরের (যা পেরিয়ে গেছে) যে কোন দিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে দুদেশের মধ্যে ১৩তম গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ বিষয়ে প্রাথমিক প্রস্তুতির কাজও শেষ করে রেখেছিল ইআরডি।
ইআরডির দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, ১৩তম জেইসি বৈঠকে আলোচনার জন্য কার্যপত্র তৈরির কাজও প্রায় শেষ করে ফেলেছিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। ইতোমধ্যেই কয়েকদফা বৈঠক করে গত ১২তম জেইসি বৈঠকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোর কি অবস্থা তার অগ্রগতি বিষয়ে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছিল। এছাড়া ১৩তম বৈঠকের এজেন্ডা কি কি হতে পারে সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মতামতও নেওয়া হয়েছিল।
বৈঠকে যেসব বিষয় আলোচনায় প্রাধান্য নির্ধারণ করা হয়েছিল সেগুলো হচ্ছে, উভয় দেশের পক্ষ থেকে গত (১২তম) বৈঠকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির অগ্রগতি, উভয় দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্য ঘাটতি, চীনের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের বিনিয়োগ ইত্যাদি।
ইআরডি সূত্র জানায়, বর্তমানে চীন বাংলাদেশের অবকাঠমো উন্নয়নে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন জরুরি হয়ে পড়ায় জেইসির উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস স্বাক্ষরিত সম্প্রতিক এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা প্রয়োজন। এজন্য বাংলাদেশের উন্নয়নে অংশীদার হতে চায় দেশটি।
চীন সম্প্রতি দেশের কয়েকটি বড় প্রকল্পে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে। চায়না গ্রেট ওয়াল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (সিজিডব্লিউআইসি) নামের প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাব এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। তাই এ প্রস্তাব খতিয়ে দেখছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
চীনের পক্ষ থেকে যেসব প্রকল্পের বিপরীতে বিনিয়োগ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সেগুলো হল- বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপন প্রকল্প, খুলনা বিমানবন্দর, পদ্মা সেতু, রাজধানীর নালা ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন ও কক্সবাজার স্টেডিয়াম নির্মাণ, ইউনিয়ন পরিষদে ইন্টারনেট সংযোগ ও পল্লী এলাকার স্কুলগুলোয় কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন।
বিনিয়োগ প্রস্তাবটি প্রতিষ্ঠানটির যুক্তরাজ্যে অবস্থিত পরামর্শক সংস্থা সিডব্লিউসি গলফ ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে হাইকমিশনে পাঠানো হয়েছিল। যেটি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠিয়েছে যুক্তরাজ্যে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন।
এর পর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব শেখ ওয়াহিদ-উজ-জামান বিনিয়োগ প্রস্তাবের বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), পিপিপি কার্যালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মতামত দিতে বলেছেন। বিনিয়োগ প্রস্তাবে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের চীন সফরের অনুরোধ করা হয়েছে। এ সময় শর্তসহ যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে চায়না গ্রেট ওয়াল ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামান্ত উইল্ড উল্লেখ করেছেন।
(দ্য রিপোর্ট/জেজে/নূরু/জেএম/ডিসেম্বর ১২, ২০১৩)