সাতক্ষীরা সংবাদদাতা : জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ‘জবাই’ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে জেলা জামায়াত।

জেলা জামায়াতের সুরা সদস্য ও কলারোয়া আলিয়া মাদ্রসার সহকারী সুপার আহম্মদ আলী বৃহস্পতিবার বিকেলে মাইকিং করে এ ঘোষণা দেন।

এদিকে জেলার কলারোয়ায় বেশ কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর কলারোয়া পৌর এলাকার মুরারীকাঠি এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে।

কলারোয়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু জানান, আওয়ামী লীগকর্মী সাইদুর রহমান, সামসুর রহমান মল্লিক, সাবেক চেয়ারম্যান আফসার আলী মল্লিকের ছেলে খোকন মল্লিক ও শ্রমিক লীগ নেতা আবু তালেবের বাড়িতে হামলা করে জামায়াত-শিবির। এসময় তারা সাইদুর রহমান ও আবু তালেবের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।

কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ দারা খান জানান, ঘটনা শুনে তিনি সেকেন্ড অফিসার এস আই সাজিদুল ইসলামকে ঘটনাস্থলে পাঠান। তিনি গাছ সরাতে সরাতে যাওয়ায় ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে একটু দেরি হয়েছে।

বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে ওসি দাবি করেন।

অন্যদিকে, সদর উপজেলার ব্রক্ষ্মরাজপুর ইউনিয়নের বাধনডাঙ্গা এলাকায় আবু সাঈদ নামের এক যুবলীগকর্মীকে কুপিয়ে জখম করেছে দূর্বৃত্তরা। তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এছাড়া আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর, কর্মীদের উপর হামলা, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর এবং পুলিশ ও পিকেটারদের মধ্যে সংঘর্ষে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সাতক্ষীরায় পালিত হয়েছে জামায়াতের হরতাল ও ১৮ দলের বিক্ষোভ কর্মসূচি।

সকালে সাতক্ষীরা শহরতলীর কদমতলায় জামায়াত-বিএনপির নেতৃবৃন্দ সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ শেষে মিছিল করে। মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সকাল ১১টার দিকে অবরোধ ও হরতাল চলাকালে সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের রামচন্দ্রপুর মোড় থেকে গাছের গুড়ি সরানোর সময় পুলিশের উপর ককটেল হামলা চালায় জামায়াত-শিবিরের পিকেটাররা। এ সময় পুলিশ তাদেরকে লক্ষ্য করে ৫২ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোড়ে। এতে পাঁচ জামায়াতকর্মী আহত হন। একই সময় পিকেটাররা আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের কুলতিয়া আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর করে। দুপুর ১২টার দিকে কালীগঞ্জের নলতা ইউনিয়নের সোনাটিকারি গ্রামের মিঠুর মুদি দোকান ভাঙচুরের পর তার ভাই আব্দুল গফুরকে (৩২) পিটিয়ে জখম করে পিকেটাররা। এছাড়া তারা নলতা বাজারের কবীর হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর শেষে তাকে পিটিয়ে জখম করে। প্রতিবাদ করায় পূর্ব নলতা গ্রামের আওয়ামী লীগকর্মী গিয়াসউদ্দিনকে মারপিট করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদর উপজেলার মোহনপুর গ্রামের আওয়ামী লীগকর্মী লিয়াকত হোসেনের বাড়ি পুড়িয়ে দেয় পিকেটাররা।

শ্যামনগরের নওয়াবেকী ও কাশিমাড়িতে কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করে পিকেটাররা। বিকেল ৩টার দিকে সাতক্ষীরা জজকোর্টের সামনে ছাত্র শিবির মিছিল করার সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে তিনটি ককটেল ছোড়ে। এ সময় পিকেটাররা একটি ট্রাক ভাঙচুর করে। পুলিশ পিকেটারদের লক্ষ্য করে সাত রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোড়ে। সাড়ে তিনটায় তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা হাইস্কুলের সামনে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা মিছিল করার সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ১০টি ককটেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশ তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে কমপক্ষে ২০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোড়ে। এতে আহত হয় ১০ জামায়াত-শিবিরকর্মী।

বিকেল ৪টার দিকে কলারোয়ার সরসকাটি হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা হুমকি দেয়। এ সময় তারা মালামাল ফেলে পালিয়ে যায়। একই সময় সদরের ছয়ঘরিয়া মোড়ে পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যসহ তিনজন আহত হন।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী জানান, জেলার বিভিন্ন স্থানে পিকেটারদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশ ৫০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়েছে। সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। জেলার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

(দ্য রিপোর্ট/এমআর/এমএআর/ডিসেম্বর ১২, ২০১৩)