জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ তার দাখিলকৃত মনোনয়নপত্রগুলো প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তার নির্দেশ মোতাবেক বিভিন্ন জেলা থেকেও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাতীয় পার্টির বাকি সদস্যরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিবেন বলেই দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার দাবি করেছেন। এরশাদ নিজে ঢাকা ও রংপুরের মোট তিনটি আসনের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। সেগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে পার্টির একটি অংশ নির্বাচনে থেকে যেতে পারেন এমন আশঙ্কায় এরশাদ নির্বাচন কমিশনকে জাতীয় পাটির দলীয় প্রতীক লাঙ্গল কাউকে বরাদ্দ না দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন। এরশাদের বক্তব্য এবং নেওয়া ব্যবস্থা যদি কার্যকর থাকে তাহলে বলা যায় জাতীয় পার্টি চলমান তফসিলে নির্বাচনে থাকছে না। অর্থাৎ সব কিছু ঠিক থাকলে ধরে নেওয়া যায়, জাতীয় পার্টি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করছে।

এরশাদকে নিয়ে অনেকদিন যাবতই জাতীয় রাজনীতিতে অনেক ধুম্রজাল সৃষ্টি হচ্ছিলো। তার নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্যান্য দলসহ তার দলের নেতাকর্মীরাও ছিলেন অনিশ্চয়তার মধ্যে। শেষ পর্যন্ত এরশাদ তার অবস্থান পরিস্কার করায় জাতীয় রাজনীতিতে মূলগত একটি পরিবর্তনের আভাস স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এরশাদের কঠোর সমালোচকরাও এখন মনে করছেন, তার এই সিদ্ধান্ত চলমান রাজনৈতিক মেরুকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিজেরা মীমাংসা করতে না পারায় জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো কয়েকদিন যাবৎ তৎপরতা চালিয়ে ফিরে গেছেন। ফেরার আগে হোটেল সোনারগাঁওয়ে তাঁর পূর্বঘোষিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বাংলাদেশের চলমান সংকট এদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই সমাধান করতে হবে। তিনি যতটুকু করতে পেরেছেন তা হলো, বিবাদমান পক্ষগুলোকে আলোচনার টেবিলে আনা। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, বিবাদমান পক্ষসমূহ শুরু হওয়া সংলাপ অব্যাহত রেখে এই সংকট মীমাংসা করে ফেলবেন।

তারানকোর এই আশাবাদে আমরাও আশান্বিত হতে চাই। আমরাও বিশ্বাস করতে চাই যে, চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে আমাদের রাজনৈতিক নেতারাই বাকি কাজটি সুরাহা করতে পারবেন। এইচএম এরশাদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর এই সিদ্ধান্ত দুপক্ষকেই মীমাংসায় পৌঁছাতে সহযোগিতা করবে বলে আমরা মনে করছি। একজন স্বৈরশাসকখ্যাত রাজনৈতিক নেতার সর্বশেষ নেওয়া ভূমিকা এদেশের জনগণ নতুনভাবে মূল্যায়ন করবে বলেই আমাদের মনে হচ্ছে। আমরা আরো মনে করি, বাংলাদেশের রাজনীতির একটি পক্ষ হিসেবে চলমান সংকট নিরসনে সমঝোতার পথ তৈরিতে এইচএম এরশাদ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠতে পারেন। আর তা না হলেও বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক যে মেরুকরণ চলছে সেখানে এরশাদ হয়ে উঠতে পারেন নির্ধারণী ফ্যাক্টর।