কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। দুই দিনের নাটকীয়তা শেষে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
রাত সোয়া ১১টার দিকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স ফরিদপুরের সদরপুরের ভাষানচর ইউনিয়নের আমিনাবাদ গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। কাদের মোল্লার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সেখানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে। এ তথ্য জানিয়েছেন কাদের মোল্লার বড় ছেলে হাসান জামিল।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) হাবিবুর রহমান দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদককে ফাঁসির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রাত ১০টার পরে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধির সঙ্গে তিনিও ফাঁসির মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ১০টা ১ মিনিটে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তিনিও প্রতিনিধি হিসেবে ফাঁসির মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ফাঁসির দড়িতে ঝোলানোর পর সিভিল সার্জন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের যে মঞ্চে কাদের মোল্লার ফাঁসি দেওয়া হয় ৪ বছর আগে সেখানেই বঙ্গবন্ধুর ৫ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এটিই প্রথম কার্যকর হওয়া রায়।
ফাঁসির পর সন্তোষ প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগ, ১৪ দল, গণজাগরণ মঞ্চ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ। বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল হয়েছে। তবে এ নিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া দেয়নি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট।
শহীদ বৃদ্ধিজীবী দিবসের মাত্র একদিন আগেই এ রায় কার্যকর করা হলো।
এর আগে মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিটে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের কথা ছিল। ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ওইদিন রাত সাড়ে দশটার দিকে কাদের মোল্লার আইনজীবীদের করা রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে ফাঁসি স্থগিত করেন চেম্বার জজ আদালত।
এরপর দুই দিন চলে সেই আবেদনের শুনানি। শেষমেষ বৃহস্পতিবার রিভিউ পিটিশন খারিজ করে আগের রায় বহাল রাখা হয়।
২০০৯ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিজেদের ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি ঘোষণা করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় এসে দলটি সেই ঘোষণা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে।
কাদের মোল্লাকে ২০১০ সালের ১৩ জুলাই গাড়ি পোড়ানোর মামলায় হাইকোর্ট এলাকা থেকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তাকে রাজধানীর পল্লবী এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুরু হয় তার বিচারকার্য। ট্রাইব্যুনাল-২ গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথমে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
এই রায়ের প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ৷ টানা আন্দোলনের মুখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ দেয়। এর আগে শুধুমাত্র আসামিপক্ষের আপিলের সুযোগ ছিল। আইন সংশোধনের পর রায়ের বিরুদ্ধে উভয়পক্ষ আপিল করে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের রায়ে কাদের মোল্লাকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
(দ্য রিপোর্ট/আরএইচ/কেজেএন/এইচএসএম/ডিসেম্বর ১২, ২০১৩)