সারাদেশে সহিংসতা : নিহত ৮
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃহস্পতিবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষে আটজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন শতাধিক। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুরে চার জামায়াত-শিবিরকর্মীসহ অজ্ঞাতপরিচয় একজন, কুমিল্লায় এক শিবিরকর্মী, সাতক্ষীরায় এক আওয়ামী লীগ নেতা এবং চট্টগ্রামে এক কাভার্ডভ্যানের চালক রয়েছেন।
এছাড়া চট্টগ্রামে শিবিরের গুলিতে পুলিশের এক এএসআইসহ পাঁচজন আহত, সাতক্ষীরার কলারোয়ায় জলিলুর রহমান (৩৮) নামের এক সেনাসদস্যের হাত ভেঙ্গে দেওয়া, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীকে হত্যার হুমকি, বগুড়ার সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের বাসায় আগুন, চট্টগ্রামে অ্যাম্বুলেন্সসহ পাঁচ গাড়িতে আগুন এবং সেখানে সংঘর্ষে দুই পুলিশসহ ছয়জন আহত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির-পুলিশের সংঘর্ষে ২৫ জন আহতসহ আওয়ামী লীগের অফিস ও দোকনপাটে আগুন, নাটোরে আওয়ামী লীগের অফিস ভাংচুর, যশোরে রেল লাইন উপড়ে ফেলা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আগুন দেওয়া, কুষ্টিয়ায় তথ্যমন্ত্রীর বাসায় প্রেট্রোল বোমা হামলাহ বিভিন্ন জেলায় সড়ক অবরোধ, ককটেল বিস্ফোরণ এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর বোমা হামলারও ঘটনা ঘটেছে।
দ্য রিপোর্ট সিলেট অফিস জানায়, নগরীরওসমানী মেডিকেল কলেজের কাজলশাহ এলাকায় পুলিশের এএসআই কামালের মাথা ইট দিয়ে থেঁতলে দেয় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। সকালে পৌনে আটটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
দ্য রিপোর্টের সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, জেলার কলারোয়া উপজেলার গোপিনাথপুরে আজিজুর রহমান আনু (৫৩) নামের এক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার রাত ১টায় এ ঘটনা ঘটে। কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহা দারা খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সাত-আটজনের মুখোশধারী দুর্বৃত্ত আজিজুর রহমানকে পিটিয়ে হত্যা করার পর অপর আওয়ামী লীগকর্মী রুস্তম আলীর বাড়িতে হানা দেয়। এ সময় তাকে না পেয়ে তারা তার অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে মারধর করে।
দ্য রিপোর্টের কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, জেলায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে জামায়াত-শিবিরকর্মীদের সংঘর্ষে আনোয়ার হোসেন নামের এক শিবিরকর্মী নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরো ১০ জন।
নাথের পেটুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি হারুনুর রশিদ বিষয়টি নি্শ্চিত করেন। দ্য রিপোর্টকে তিনি জানান, সংঘর্ষ চলাকালে আনোয়ার হোসেন আহত হয়। রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
দ্য রিপোর্টের লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা জানান, জেলায় র্যাবের গুলিতে বিএনপি-জামায়াত জোটের চার নেতাকর্মী নিহত হন। পরে জেলা বিএনপির এক বিবৃতিতে তাদের চার নেতাকর্মী নিহতের প্রতিবাদে শনিবার জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয়। এ ঘটনায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবুসহ ৬০ জন গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়া এনএসআই সদস্য সন্দেহে অজ্ঞাতপরিচয় একজনকে পিটিয়ে হত্যা করে বিএনপি-জামায়াতকর্মীরা।
নিহতরা হলেন- জেলা যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ জুয়েল, লাহারকান্দি ইউনিয়ন ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাহবুব, শিবিরকর্মী মাহমুদ শিহাব ও জামায়াতের কর্মী বেলাল।
এছাড়া দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অজ্ঞাতপরিচয় ওই যুবকের লাশ জকসিন সড়কে পড়ে থাকে। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে রাত ৭টায় সদর থানার এ এস আই মো. শাহজাহান লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়।
গুলিবিদ্ধরা হলেন- জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবু, যুবদলকর্মী মাসুম (২৮), ফিরোজ (৩০), মুরাদ (২৬), রুবেল (২৫), ছাত্রদলকর্মী নেছার আহম্মদ, মো. পরান, শিবিরকর্মী মো. টিপু, আমির হোসেন, রাশেদ আলম, পথচারী ফারুক (৩০), রাকিব হোসেন (২০), শিমুল (২৫), মামুন হোসেন (২৫), মানিক (২৬), আরিফ (২৫)-সহ ৬০ জন। এদের মধ্যে আটজনের আবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল, মানারাত ও উপশম হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সোয়া ৬টার দিকে র্যাব সদস্যরা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবুর বাসভবনের গেট ভেঙে তাকে গ্রেফতার করতে গেলে পরিবারের সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। এ সময় র্যাব সদস্যরা সাবুর পায়ে গুলি করে তাকে ও তার ছোট ভাই আজিজুল করিম বাচ্চুকে আটক করে নিয়ে যায়। এ সময় সাবুর ব্যবহৃত তিনটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে শহরের চকবাজার এলাকায় বিএনপির একটি মিছিলে গুলি চালায় র্যাব সদস্যরা। এ সময় জেলা যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ জুয়েলসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। এতে ঘটনাস্থলেই ইকবাল মাহমুদ জুয়েল নিহত হন। তবে সদর থানার ওসি ইকবাল হোসেন ঘটনাটি এড়িয়ে যান।
এ খবর ছড়িলে পড়লে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। এ সময় শহরের সোনালী ব্যাংকে অগ্নিসংযোগের চেষ্টাসহ সড়কে আগুন জ্বালিয়ে ২০-২৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। এর কিছুক্ষণ পর শহরের বাগবাড়ী, ঝুমুর সিনেমা ও এলজিইডির সামনে র্যাবের সঙ্গে ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে মাহবুবুর রহমান ও শিহাব নামের ১৮ দলীয় জোটের দুইকর্মী নিহত হন বলে নিশ্চিত করেন সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফয়েজ আহম্মদ ভূঞা।
জেলার সহিংস এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন রাতে লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপারকে বদলির জন্য পুলিশ সদর দফতরকে চিঠি দেয়।
দ্য রিপোর্টের চট্টগ্রাম সংবাদদাতা জানান, নগরীতে বুধবার রাতে পিকেটারদের ঢিলের আঘাতে আহত হন কাভার্ডভ্যানের চালক মাহাবুব আলম (৩৩)। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। চমেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
নিহত মাহাবুবের গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলার আমতলী এলাকায়। তার বাবার নাম বেলাল উদ্দিন।
(দ্য রিপোর্ট/এমএআর/ডিসেম্বর ১৩, ২০১৩)