আজ ঐতিহাসিক শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিন বিজয়ের চূড়ান্ত মুহূর্তে ঢাকায় অবস্থানরত বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। অনেক রহস্যে ঢাকা সেই দিনের নৃসংশতা জাতির কাছে আজও স্পষ্ট নয়। ৯ মাস যারা ঢাকায় বসবাস করতে পারলেন কী কারণে কেন তাদের বিজয় দেখতে দেওয়া হলো না-সে প্রশ্ন আজও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তবে মোটাদাগে বলা যায়, পাকবাহিনীর দোসর-আলবদর-আলশামস তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের ঘর থেকে ডেকে এনে হত্যা করে। কেন তাদের এই মিশন তার কোনো দালিলিক প্রমাণ না মিললেও বলা যায় সদ্য স্বাধীন একটি জাতি যাতে দিকনির্দেশনাহীন হয়ে পড়ে সেই লক্ষেই পরাজিত শক্তি সেই দিন এই সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল।

৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হোক আর অতি সাধারণ একজন মানুষ হোক ঝরে যাওয়া প্রতিটি প্রাণই আমাদের কাছে সমান মূল্যবান। স্বীকৃতি মিলুক আর না মিলুক এই সব জীবনই আমাদের স্বাধীনতার জন্য উৎসর্গকৃত। তবুও নিজের কর্মে দেশপ্রেমে যারা অনুকরণীয় তাদের আত্মদানকে বিশেষ মর্যাদা দিতেই ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বরকে স্মরণ করতে প্রতি বছর জাতি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করে থাকে।

স্বাধীনতার উষালগ্নে জাতির প্রত্যাশা ছিল আমাদের উপর যারা অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে স্বজনহারা করেছে তাদের বিচার হবে। আর না হোক, প্রতিটি আত্মদান যাতে জাতির আগামী দিনের পথ চলায় অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকে তার জন্য প্রতিটি সত্য উৎঘাটন করা হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমরা আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আত্মত্যাগকেও তুলে ধরতে পারিনি। আর সে কারণেই গণমানুষের অংশগ্রহণমূলক একটি স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে সেই গণমানুষেরই মুক্তি আসেনি।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এই দিনে, ১৯৭১ সালে হারিয়ে যাওয়া আমাদের সেই সব শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করছি। কামনা করি, তাদের রেখে যাওয়া কর্মের মধ্যদিয়ে এ জাতির চিন্তার মুক্তি আসুক। যে পথ ধরে আসবে স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল। সব মানুষ-সব চিন্তার সহাবস্থানমূলক এক বিশ্বজনীন জাতি হিসেবে ঘটবে বাংলাদেশের আবির্ভাব।