এরশাদের ‘লাঙ্গল’ নিয়ে আবারও ‘টানাটানি’
সাগর আনোয়ার, দ্য রিপোর্ট : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচন বর্জন করে র্যাবের হাতে আটকের পর এবার তার দলের প্রতীক ‘লাঙ্গল’ নিয়ে শুরু হয়েছে টানাটানি। তিনি নির্বাচন না করলেও তার নির্দেশ অমান্য করে বৃহস্পতিবার থেকেই ১২৫ থেকে ১৩০টি আসনে জাপা প্রার্থীদের লাঙ্গল প্রতীক দিয়ে চিঠি দিয়েছেন দলটির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার।
প্রার্থীরা মহাসচিবের স্বাক্ষর করা জাপার লাঙ্গল প্রতীকের চিঠি সংগ্রহ করেন যুগ্ম-দপ্তর সম্পাদক আবুল আহসান জুয়েলের কাছ থেকে। তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি আবুল আহসান জুয়েল।
জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার স্বাক্ষরিত প্রতীক প্রাপ্তির চিঠির বিষয়টি স্বীকার করেন ফেনী-৩ আসনের মনোনয়ন প্রার্থী রিন্টু আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘আমি পার্টির মহাসচিব স্বাক্ষরিত প্রতীকের চিঠি পেয়েছি।’
একইভাবে কিশোরগঞ্জ জাপার প্রার্থী মুজিবুল হক চুন্নু দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। চিঠিও পেয়েছি।’
এদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে এরশাদ ‘অসুস্থ’। তাই রওশন এরশাদ, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ‘লাঙ্গল প্রতীক’ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকে যাতে ‘লাঙ্গল’ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া না হয়।
তিনি শুক্রবার বলেন, ‘আমি অসুস্থ নই। আমাকে আটকে রাখা হয়েছে।’
কিন্তু এরশাদের নির্দেশের পরও সবার অগোচরে প্রার্থীদের ‘লাঙ্গল প্রতীক’ বরাদ্দের চিঠি দেন মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার। অথচ শুক্রবারও কয়েকবার তিনি বলেছেন, ‘এই বিষয় নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি না, এটাই শেষ কথা।’
এরশাদের একজন বিশেষ উপদেষ্টা দাবি করেন, সরকার তাকে (এরশাদ) আটকে রেখে জাতীয় পার্টির কিছু নেতাকে দিয়ে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করাবে। এটা এখন নিশ্চিত। এমন সংবাদ পেয়েই এরশাদ কাউকে লাঙ্গল প্রতীক না দিতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন। কিন্তু এরপরও মহাসচিব প্রার্থীদের চিঠি দিয়েছেন।
তবে এ বিষয়ে এখনও স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না জাতীয় পার্টির আওয়ামীপন্থী নেতারা। জাপার সরকার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না মহাসচিবও।
রুহুল আমীন হাওলাদার শুক্রবার দুপুরে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে যাব না। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেছি।’
কিন্তু খোঁজ নিয়ে নিয়ে দেখা গেছে, তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। ইতোমধ্যে জাপার যুগ্ম-মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকাসহ সাতজন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হওয়ার পথে।
দলের চেয়ারম্যানের আবেদনের পরও পার্টির প্রতীক অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারেন কিনা- এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘মনোনয়নপত্র যদি প্রার্থীরা প্রত্যাহার না করেন তাহলে কমিশনের কিছুই করার নেই। যে আসনে জাপার প্রার্থী থাকবে সে আসনে প্রতীক চলে যাবে।’
তবে আরপিও অনুযায়ী দল বিভক্ত হলেও মূল দলের যিনি প্রধান থাকবেন তিনিই সেই পার্টির নেতৃত্বে থাকবেন। আর প্রতীকও থাকবে তার নামে। যেহেতু এরশাদের নিবন্ধিত দলের প্রতীক লাঙ্গল সেহেতু দলের প্রধানের অনুমতি ছাড়া কাউকে লাঙ্গল প্রতীক দেওয়ার বিধান নেই।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম শাখাওয়াত হোসেন এ বিষয়ে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘নিবন্ধনের প্রথম শর্তই হলো- দলের প্রধানের অনুমতি ছাড়া কাউকে দলের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া যাবে না।’
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টি ভেঙ্গে আরেকটি জাতীয় পার্টি গঠন করেছিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তিনিও লাঙ্গল প্রতীক চেয়েছিলেন। বিষয়টি কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল। কিন্তু কোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ পান এরশাদ। দলীয় প্রধানের বাইরে কেউই এ প্রতীক বরাদ্দ দিতে বা নিতে পারেন না।’
(দ্য রিপোর্ট/সাআ/শাহ/এমএআর/ডিসেম্বর ১৪, ২০১৩)