শিম চাষে ভাগ্যবদল
সরেজমিন উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের কালীরপাঠ গ্রামে শিমক্ষেতে কথা হয় প্রভাত চন্দ্রের সঙ্গে। এ সময় শিমক্ষেতে তার স্ত্রী-সন্তানসহ অন্যদের কাজ করতে দেখা যায়।
তিনি জানান, প্রায় ৯ বছর আগে নাটোর জেলায় মেয়েজামাইয়ের বাড়ি গিয়ে শিম চাষ দেখে অনুপ্রাণিত হন। সেখানেই তিনি জানতে পারেন কম খরচে অল্প সময়ে শিম চাষ পদ্ধতি। এরপর নিজে বাড়িতে এসে শিম চাষের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তার নিজের .৫ শতক ভিটেমাটি ছাড়া আর কোনো আবাদি জমি না থাকায় সমস্যায় পড়েন। তারপরও তিনি পিছপা হননি।
নিজের জমি না থাকায় প্রথমে তিনি বাড়ির পাশের সরকারি রাস্তার দু’ধারে শিম চাষ শুরু করেন। টানা তিন বছর সরকারি রাস্তার ধারে শিম চাষে তিনি ব্যাপক সফলতা অর্জন করেন। নিজের সংসার চালিয়েও তিনি টাকা সঞ্চয় করেন।
২০০৮ সালে রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম তার শিম চাষের বিষয়ে জানতে পেরে সরেজমিনে দেখতে আসেন। রাস্তার ধারে শিম চাষ দেখে তিনি আনন্দিত হন এবং কৃষিমেলায় সফল শিমচাষি হিসেবে প্রভাত চন্দ্রকে সনদপত্র ও একটি স্প্রে মেশিন প্রদান করেন। পরে কৃষি অফিসার আমিনুল ইসলাম প্রভাত চন্দ্রকে এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দিয়ে বর্গা জমি নিয়ে ব্যাপক আকারে শিম চাষে উদ্বুদ্ধ করেন।
২০০৯ সালে নিজ গ্রামে .৯২ শতক জমি বর্গা নিয়ে শিম চাষ করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা অর্জন করেন। ওই বছর চ্যানেল আইয়ের পরিচালক শায়েখ সিরাজ নিজে শিম চাষের প্রকল্প দেখে মুগ্ধ হয়ে চ্যানেল আইয়ে প্রভাত চন্দ্রকে নিয়ে শিম চাষের ওপর বিশেষ প্রতিবেদন প্রদর্শন করেন।
এভাবে শিম চাষকে পেশা হিসেবে গ্রহণের পর থেকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি প্রভাত চন্দ্র সরকারকে। ২০১২ সালে তিনি চাষের সব খরচ বাদ দিয়েও দেড় লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করেন। জাঁকজমকভাবে মেয়ের বিয়ে দেন। বর্তমানে তার একমাত্র ছেলে প্রীতম রংপুর সরকারি কলেজে এইচএসসিতে পড়ছে।
এ বছর তিনি সাড়ে ১৯ হাজার টাকায় বর্গা নেওয়া .৯২ শতক জমিতে ইপসা-২ ও রূপভান প্রজাতির শিম চাষ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় এবং বাজার মূল্য ভালো থাকায় তিনি চাষাবাদের খরচ বাদ দিয়েও ২ লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করতে পারবেন বলে দিরিপোর্ট২৪-এর কাছে আশাব্যক্ত করেন।
সরকারিভাবে তাকে ঋণ প্রদান করা হলে তিনি পর্যাপ্ত পরিমাণ জমিতে শিম চাষের মাধ্যমে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি এলাকার শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারতেন বলে জানান।
(দিরিপোর্ট২৪/এফএস/এএস/জেএম/অক্টোবর ২৪, ২০১৩)