দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : প্রধান নির্বাচক হয়েছেন ফারুক আহমেদ। মিনহাজুল আবেদীন নান্নু সেখানে কিন্তু চিহ্ন এঁকে দিয়েছেন। কারণ তিনিও ওই পদে প্রার্থী ছিলেন। তেতে ওঠা নান্নু বিসিবির সভাপতির অপেক্ষায়। তারপর তিনি জানাবেন, থাকছেন কিনা! কমিটির তৃতীয় সদস্য হাবিবুল বাশার। অনেকেই মনে করছেন হাবিবুলের কাজ এখন একটাই, ফারুক ও নান্নুর মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করা। তিনি নিজেও ভাবছেন তাই। এক সাক্ষাৎ কারে তিনি এর বাইরেও ক্রিকেট নিয়ে বলেছেন অনেক কথাই; শুনুন তার মুখ থেকে।

প্রশ্ন : ফারুক আহমেদ প্রধান নির্বাচক; কতটা ঠিক মনে করছেন?

হাবিবুল বাশার : উনি এর আগেও প্রধান নির্বাচক ছিলেন। অবশ্যই ঠিক আছে। তার যোগ্যতা আছে বলেই এ পদে তাকে বিবেচনা করা হয়েছে।

প্রশ্ন : নান্নু এ নিয়ে নাকি নাখোশ?

বাশার : সত্যি বলতে কি আমি এ নিয়ে ভাবছি না। এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয় হতে পারে।

প্রশ্ন : যদি নান্নু নাখোশ হন, তাহলে কাজে সমস্যা হবে না?

বাশার : ২ জনই আমার চেয়ে সিনিয়র। আমার কাজ হচ্ছে ২ জনের সঙ্গেই সমন্বয় রক্ষা করা। তাই করব।

প্রশ্ন : দলের কোন কোন দিক নিয়ে কাজ করা দরকার?

বাশার : আসলে পেস আক্রমণ, পাওয়ার প্লে’তে ভালো রান ওঠানো নিয়ে কাজ করতে হবে।

প্রশ্ন : যখন সাকিবদের খেলতে দেখেন, আগের দিনের কথা মনে পড়ে?

বাশার : অবশ্যই মনে পড়ে। স্মৃতিগুলো এখনও যেন তরতাজা।

প্রশ্ন : কোন স্মৃতি সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে?

বাশার : ২০০৫ সালে জিম্বাবুইয়েকে যখন প্রথম টেস্টে হারালাম। প্রথমবার আমরা টেস্ট জিতেছি। সে কী আনন্দ!

প্রশ্ন : আপনার সময়ে দল অনেক সফল ছিল, এর রহস্য কী?

বাশার : এখনও দল সফল। আমি আসলে সবসময় ঐক্যবদ্ধ রাখতাম সবাইকে। অনেক ক্রিকেটার আছে আমার জন্যই যেন খেলত।

প্রশ্ন : অবসরের সময়টি কি অনেক কষ্টের ছিল?

বাশার : এটাতো আসলে বলে বোঝাতে হয় না। তাই আমি বলে বোঝাতে পারবো না। বারবার মনে হচ্ছিল কি যেন হারিয়ে ফেলছি। ক্রিকেট খেলবো না, এটা অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত। আসলে আমি কখনোই ক্রিকেটের বাইরে কিছু ভাবিনি। কিছু চিন্তাও করি নি। সিদ্ধান্ত নিতে তাই অনেক বেশি কষ্ট লাগছিল। ওই মুহূর্তটা আসলে কারো সঙ্গেই শেয়ার করার মতো নয়। খুব বেশি খারাপ লেগেছে।

প্রশ্ন : ঘরোয়া ক্রিকেট আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ফারাকটা কোথায়?

বাশার : এটাতো প্রায় একই রকম। কারণ সবখানেই নিজের সেরাটা মেলে ধরতে না পারলে বাদ পড়ার কথা চিন্তা করতেই হয়। আমি যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বাদ পড়েছিলাম, তখনই ঠিক করেছিলাম জাতীয় দলে ফেরার মতো পারফরম্যান্স না হলে আমি অবসর নেবো। সেটা নিতে গিয়েই অনেক বেশি সময় লেগেছিল। তবুও একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছি বলেই খুশি আমি।

প্রশ্ন : আপনার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে আলোচিত এক অধ্যায়ের নাম আইসিএল। আইসিএল খেলাটা ঠিক ছিল কিনা?

বাশার : মানুষ তার জীবনে সকল সিদ্ধান্ত যে সঠিকভাবে নেয় এমনটি বলা যাবেনা। তাই আমি অনেক হলফ করেই বলতে পারি মানুষের সব সিদ্ধান্ত সব সময় ঠিক হয় না। আইসিএলে খেলে আমি এখন আফসোস বোধ করি। যদি আইসিএল না খেলতাম, তাহলে আমার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা আরো দীর্ঘায়িত হতো। আইসিএল খেলাটা আমার জীবনের শেষ পর্যন্ত আফসোস হয়েই থাকবে।

প্রশ্ন : ক্রিকেট নিয়ে আপনার আক্ষেপ আছে কি?

বাশার : সবাই তো তার ক্যারিয়ার নিয়ে কখনোই সন্তুষ্ট থাকে না। তাই আমিও যে সব ব্যাপার নিয়ে সন্তুষ্ট তা নয়। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ৫০ টেস্ট খেলা অবশ্যই সৌভাগ্যের। ৩ হাজার রান করেছি। এটাও কৃতিত্বের। এতো কিছু প্রাপ্তির পরও আক্ষেপ থাকছে। ৩টির জায়গায় ১০টি সেঞ্চুরি থাকলে ভালো লাগতো। তবে ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি নেই, এই নিয়ে কোনো হতাশা নেই।

প্রশ্ন : কোন দেশের কোন বোলারকে খেলতে কষ্ট হয়েছে?

বাশার : ওভাবে আসলে আলাদা করাটা কিছুটা কঠিনও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যেসব বোলার খেলেন, তারা সবাই ভালো। তাদের খেলাটা সহজ নয়। গ্লেন ম্যাকগ্রা, শন পোলক, ওয়াসিম আকরাম, চামিন্দা ভাসরা খুবই ভালো বোলার। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মুরালিধরনকে এগিয়ে রাখবো। মুরালিকে খেলা খুবই কষ্টকর। একজন স্পিনারের বোলিংয়ে এতো বৈচিত্র্য আমি আর দেখিনি।

প্রশ্ন : নির্বাচক কমিটিতে কাজ করছেন, এখন কি লক্ষ্য?

বাশার : আমি আসলে ক্রিকেটের সঙ্গেই জড়িত থাকতে চাই। খেলা ছাড়ার পর নির্বাচক কমিটিতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। ২ বছর হয়েও গেল। এখন দল ভালোও করছে। দল গঠন করা আমাদের কাজ।

প্রশ্ন : আপনার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস কোনটি?

বাশার : অবশ্যই সেন্ট লুসিয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০৮ রান।

প্রশ্ন : সামনে টোয়েন্টি২০ বিশ্বকাপ, দল নিয়ে কি ভাবনা?

বাশার : প্রথমত প্রথমপর্ব পাড়ি দেবো। এরপর মূলপর্বে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জয়।

(দ্য রিপোর্ট/এমএ/নূরু/এএস/সিজি/ডিসেম্বর ১৪, ২০১৩)