হোয়াইটওয়াশ মুশফিকরা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : জাতীয় দলের অসহায় আত্মসমর্পণের সঙ্গে হোয়াইটওয়াশও সম্পন্ন হয়েছে। আগের ২ ম্যাচের পর তৃতীয় ম্যাচেও ৮ উইকেটের হার লজ্জায় ফেলেছে মুশফিকদের। ১৮৮ রান করেও ছোটদের কাছে নাকাল হয়েছে বড়রা। সেখানেই খুব মনে হয়েছে ওপেনার তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসানের কথা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের খেলা সর্বশেষ আন্তর্জাতিক টোয়েন্টি২০ ম্যাচেও ছিলেন না তারা। মিডলঅর্ডারের নির্ভরতা নাসির হোসেন ও মুমিনুল হক খেলছেন ‘এ’ দলে। ফলে চ্যালেঞ্জ কাপে মুশফিকুর রহিমের জাতীয় দল ছিল অনেটাই ভাঙা-চোরা। তা প্রমাণ হয়েছে মাঠেও।
আগেই সিরিজ হার নিশ্চিত হয়েছিল জাতীয় দলের। শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে চ্যালেঞ্জ কাপের তৃতীয় ও শেষ টোয়েন্টি২০ ম্যাচে জাতীয় দলকে ৮ উইকেটে বিধ্বস্ত করেছে নাসিরের ‘এ’ দল। জাতীয় দলের করা ৯ উইকেটে ১৮৮ রান ১৬.৩ ওভারে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ছুঁয়ে ফেলেছে নাসিরের দল। টোয়েন্টি২০ বিশ্বকাপের আগে এ ফরমেটের ক্রিকেট অনুশীলনের তেমন সুযোগ না থাকায় আগেভাগেই চ্যালেঞ্জ কাপের আয়োজন করেছিল। আর সেখানে প্রতিভাত বাংলাদেশ জাতীয় দলের বেহাল দশা।
সিরিজে প্রকট ব্যর্থতা ফুটে উঠেছে জাতীয় দলের। শামসুর ও মুশফিকের ব্যাটে রান থাকলেও ব্যর্থতায় পর্যবসিত ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নাঈম ইসলাম, এনামুল হক বিজয় এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রিক্রুট সৌম্য সরকার। আর বোলিংয়ে ধারাবাহিকতা ছিল না মাশরাফি বিন মর্তুজা, রুবেল হোসেন, আল-আমিন হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক ও সোহাগ গাজীদের। এর চেয়ে বরং ‘এ’ দলকে নেতৃত্ব দেওয়া নাসির খন্ডকালীন বোলার হিসেবে দারুণ বোলিং করেছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের বিপক্ষে। টোয়েন্টি২০ ফরমেটে বাংলাদেশ দলের পরিস্থিতি ভালো নয় তা আগেই প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর ২০ ওভারের চমকে যে কোনো দলই জিতে যেতে পারে। সে কারণেই চ্যালেঞ্জ কাপ। কিন্তু টোয়েন্টি২০ ফরমেটে জাতীয় দলের বাজে চেহারাটাই ফুটে উঠেছে। হোয়াইটওয়াশ হয়েছে জাতীয় দল। টোয়েন্টি২০ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড অতিক্রম করতে ক্রমেই জায়ান্ট কিলার বনে যাওয়া আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলতে হবে। এমন নৈপুণ্যের পর তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশ কি করবে তা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে এদিন প্রথম ব্যাট করে সবচেয়ে ভালো ব্যাটিং প্রদর্শন করে জাতীয় দল ৯ উইকেটে তুলেছিল ১৮৮ রান। অবশ্য ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আগের মতোই রান পেয়েছেন মুশফিক আর শামসুরই। ১১১ রানেই ৬ উইকেট চলে যায় মুশফিকদের। শামসুর মাত্র ১২ বলে ৪ চার ও ৩ ছয়ে ৩৭ এবং মুশফিক ২৪ বলে ৪ চার ও ২ ছয়ে সর্বোচ্চ ৩৮ করে আউট হয়েছেন। শামসুরের কল্যাণেই পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে আসে ৭৭ রান। এরা ফিরে যাওয়ার পর ১৬.৫ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪৮ রানে পরিণত দলটিকে এতদূর নিয়ে গেছেন বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি মাত্র ১৫ বলে ৩ চার ও ৩ ছয়ে ৩৬ রানের একটি হার না মানা ঝড়ো ইনিংস গড়েছেন। মুক্তার দারুণ বোলিং করে মাত্র ২১ রানেই নিয়েছেন ৩ উইকেট। মনে হয়েছিল এবার জিতে নিজেদের মর্যাদা কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধার করবে মুশফিকরা। কিন্তু তা হয়নি। কৌশল পরিবর্তন করে মার্শাল আইয়ুব ও মুমিনুলকে ওপেনিং করানো ‘এ’ দল উড়ন্ত সূচনা পেয়েছে। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে আসে ৭৪ রান। এরপর মার্শাল-মুমিনুল দ্রুত ফিরে গেলেও মিঠুন এসে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছেন। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন রুম্মানও। মাত্র ৫০ বলে জুটিতে ১০৩ রান তুলে অবিচ্ছিন্ন ছিলেন এ ২ জন। ২১ বল হাতে রেখেই ১৬.৩ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১৯০ রান তুলে নিয়েছে ‘এ’ দল। ৮ উইকেটের বড় জয়ে সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতেছে তারা। মুমিনুল ২৩ বলে ৯ চার ও ২ ছয়ে ৫৫ এবং মিঠুন ৩০ বলে ৩ চার ও ৬ ছক্কায় অপরাজিত ৬৭ রান করেছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জাতীয় দল : ১৮৮/৯; ওভার ২০ (এনামুল ১৩, শামসুর ৩৭, মুশফিক ৩৮, মাহমুদউল্লাহ ১৪, সোহাগ ২০, মাশরাফি ১৭, রাজ্জাক ৩৬; আরাফাত ২/৩৫, ইলিয়াস ২/৩৩, নাসির ২/৪০, মুক্তার ৩/২১)
‘এ’ দল : ১৯০/২; ওভার ১৬.৩(মার্শাল ২৫, মুমিনুল ৫৫, মিঠুন ৬৭*, রুম্মান ৩৭; মাশরাফি ১/৩০, আল-আমিন ২/২৮)
ফল : ‘এ’ দল ৮ উইকেটে জয়ী
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ‘এ’ দল ৩-০ ব্যবধানে জয়ী
(দ্য রিপোর্ট/এমএ/নূরু/এএস/সিজি/ডিসেম্বর ১৪, ২০১৩)