দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় একের পর এক কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শনিবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা জানান তিনি।

রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের সময় যেন মারামারি-কাটাকাটি ও ঝামেলা না হয় সেজন্যে সমঝোতার ডাক দিয়েছি। যে কটি দল এসেছে সমঝোতা করেছি। সমঝোতার খাতিরে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছি। অনেকেই ভাবতে পারেন এটা অস্বাভাবিক। যারা সর্বদলীয় সরকারে এসেছে তাদের সঙ্গে সমঝোতার কারণেই এটা হয়েছে। বিএনপি আসলেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতাম। গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার স্বার্থেই তা করতাম।

তিনি বলেন, ‘আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেছি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করতে। জনগণের স্বার্থে আমি তাকে (খালেদা) ফোন করে আলোচনার ডাক দিয়েছি। সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি। কোন মন্ত্রণালয় চান তাও বলেছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারা সৃষ্টি করার জন্যে ফোন করেছি, দাওয়াত দিয়েছি। আমার চেষ্টা আমি করেছি। আমি যতবারই ডেকেছি উল্টো ‘থ্রেট’ ‘আল্টিমেটাম’ পেয়েছি। তারপরও আমি চেয়েছি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই। আসলে একটি স্থায়ী বন্দোবস্ত দরকার।’

বিএনপি ও জামায়াতের কর্মকাণ্ডকে সহিংস ও নাশকতা উল্লেখ করে তা রুখে দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘অনেক ধৈর্য্যর পরিচয় দিয়েছি আর নয়, এখন অপশক্তিকে মোকাবিলা করতে হবে।’

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তার দেওয়া ৩৫ মিনিটের বক্তৃতায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্ করে বলেন, ‘আপনি যখন জামায়াত নিয়ে থাকতে চান, ঘর করতে চান, করুন। আমাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু মানুষ হত্যা, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা বন্ধ করুন।’

এ সময় যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় একের পর এক কার্যকর করা হবে। লক্ষ্য ছিল ১৪ ডিসেম্বরের আগে অন্তত একজন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় কার্যকর করব।’

এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের বিভিন্ন তদবিরের ফোনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যেখান থেকেই, যাকে দিয়েই ফোন করান না কেন বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে যা করার তাই করব। ক্ষমতা আমার কাছে বড় নয়, আমার কাছে সবচেয়ে বড় জনগণের কল্যাণ, দেশের মঙ্গল। ন্যায় সত্য বাংলার মাটিতে প্রতিষ্ঠা করবই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছি তখন থেকেই বিএনপির নেত্রীর মনে অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্যে ৭১-এর মতো মানুষ হত্যা করছে। বাসে-সিএনজিতে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে, রেলের ফিশপ্লেট খুলে মানুষ হত্যা করছে। এর একটাই কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে চান তিনি। তা না হলে বিজয়ের মাসে কিভাবে আন্দোলনের নামে মানুষ মারতে পারে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে এটাই আমার প্রশ্ন? মানুষ মারার এ ধরনের বীভৎস চিত্র সহ্য করা যায় না।’

তিনি বলেন, ‘উনার (খালেদা) একটাই চিন্তা-চেষ্টা ওদের (জামায়াত-যুদ্ধাপরাধী) কিভাবে রক্ষা করা যায়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনো কিছুতেই তিনি (খালেদা) আসলেন না। তার কারণ একটাই। উচ্চ আদালতের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে, তারা নির্বাচন করতে পারবে না। এ জন্য তিনিও নির্বাচনে আসবেন না। জামায়াতকে ছাড়া নির্বাচনে আসবেন না ওই একটাই কারণ।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তৃব্য রাখেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী প্রমুখ।

(দ্য রিপোর্ট/এমএন/নূরু/এনডিএস/ডিসেম্বর ১৪,২০১৩)