প্রসঙ্গ : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৪ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ যখন ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে নির্বাচনে যাচ্ছে এবং তারা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে, তখন মনে হচ্ছিল লোক দেখানোর মতো হলেও একটি নির্বাচনী লড়াইয়ের আয়োজন হতে যাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে অনেক নাটকীয় ঘটনার মধ্যদিয়ে এইচ এম এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে আসায় সে আয়োজনও মাঠে মারা যায়।
তখনই এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, কার্যত একটি একপক্ষীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। কিন্তু সেটি যে এমন পরিণতি পাবে সম্ভাবত: সরকারের উচ্চমহলের বাইরে কেউই তেমনটি ধারণা করতে পারেনি। সরকারের উচ্চ মহলের কথাটি বলা এই কারণে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন নিয়ে সর্বশেষ যে মন্তব্যটি করেছেন তাতে বুঝা যায়, তিনি যেভাবে চেয়েছেন নির্বাচনের ছকটি সেভাবেই তৈরি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রতিনিধিত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার কথা বলে তার অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসার জন্য বিরোধী দলকে আহ্বান জানান। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট তাতে সাড়া দেয়নি। তাদের দাবি ছিল, শেখ হাসিনা নন, কোন নিরপেক্ষ ব্যক্তির অধীনে নির্বাচন হতে হবে।
গত কয়েক মাস যাবত দেশে এ নিয়ে বিরোধী জোটের সঙ্গে সরকার পক্ষ বাক ও শক্তির যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। ইতোমধ্যে অসংখ্য প্রাণ এবং সম্পদহানি হয়েছে। কোনো সমঝোতার পথ বেরিয়ে আসেনি। শেষতক ‘সাংবিধানিক’ধারাবাহিকতায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং আজকের বিনা প্রতিন্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার এই নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা। যতদূর মনে হচ্ছে, তফসিল মোতাবক নির্বাচন কমিশন বাকি আয়োজনও সম্পন্ন করে ফেলবে।
সংবিধান অনুযায়ী বিজয়ীরা আগামী পাঁচ বছরের জন্য একটি সরকারও গঠন করবে। সে পর্যন্ত প্রাণ এবং সম্পদহানির ধারাবাহিকতা বজায় থাকার আশঙ্কাও বিদ্যমান।
বর্তমান তফসিলে পাঁচ বছরের জন্য যে সরকার নির্বাচিত হতে যাচ্ছে তাতে অনেক বিজ্ঞজনের সঙ্গে আমরাও শঙ্কিত। দেশ কোনো গভীর খাঁদের কিনারায় যাচ্ছে কী না সেটাই এখন দেশবাসীর প্রধান ভাবনা।