রাজু হামিদ, দ্য রিপোর্ট : দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভোটের আগেই সরকার গঠন নিশ্চিত করে ফেলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির মনোনীত প্রার্থীরা ৩শ’ আসনের মধ্যে ১৫১টিতে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

নির্বাচন ছাড়াই সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের বিজয়ের ঘটনা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা।

সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩শ’ আসনের মধ্যে কোনো পক্ষ ১৫১ আসন (সংখ্যাগরিষ্ঠতা) পেলে সরকার গঠন করতে পারবে। তবে এজন্য নির্বাচন কমিশন থেকে জারি করা গেজেট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন শেষে বাকি আসনগুলোর ফলাফল পাওয়ার পরই একসঙ্গে ৩শ’ আসনে বিজয়ীদের নাম সরকারিভাবে ঘোষণা করা হবে।

অভিযোগ রয়েছে, বিজয় নিশ্চিত করতে নিজেদের তৈরি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ভঙ্গ করেছে ক্ষমতাসীন দল। এক্ষেত্রে সরকারের সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে নির্বাচন কমিশন।

উল্লেখযোগ্য অভিযোগ হলো- নির্বাচনে প্রার্থী সংকট ঠেকাতে জাতীয় পার্টির সদস্যদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন গ্রহণ করেনি নির্বাচন কমিশন। আবার দলটির চেয়ারম্যানের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জাতীয় পার্টির কয়েকজন প্রার্থীকে ‘লাঙল’ প্রতিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একটি ফরমায়েশি কমিশন। এক ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনের নামে প্রহসনের নাটক মঞ্চস্থ করছে। জনগণ, বিরোধী রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ, সুশীল সমাজ কারোর মতামতকেই আমলে নিচ্ছে না সরকার ও নির্বাচন কমিশন।’

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৫ জানুয়ারি। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্তত ২২টি নিবন্ধিত দল এ নির্বাচন বর্জন করেছে। তাদের অনুপস্থিতিতে নির্বাচনের তিন সপ্তাহ আগেই ফাঁকা মাঠে নিজেদের সরকার গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফেলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ১২৭ জন, জাতীয় পার্টির ১৮, জাসদের ৩, ওয়ার্কার্স পার্টির ২ ও জেপির (মঞ্জু) ১ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রার্থীর বিজয় গণতন্ত্র ও নির্বাচনের জন্য হুমকি বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘যা হচ্ছে তা ইলেকশন নয়, সিলেকশন। এটা গণতন্ত্রের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর মাধ্যমে দেশ অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার জনগণের সঙ্গে প্রহসন করছে।’

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এটা গণতন্ত্রের নামে প্রতারণা। যে সব প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন তারা নিজেদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করলে তাদের কাছেও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।’

এদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বলেছে, বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এতজনের বিজয় গণতন্ত্র ও নির্বাচনের জন্য আত্মবিধ্বংসী।

অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নির্বাচন নিয়ে তেমন আমেজ নেই আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝেও।

একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ‘বিতর্কিত’ ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ২১ শতাংশ। ২৭৮টি আসন নিয়ে বিএনপি সরকার মাত্র দেড় মাস স্থায়ী হয়েছিল। এরপরেও ওই নির্বাচন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। শেষমেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন পাস করে তার অধীনে আবার নতুন নির্বাচন দিতে হয়েছিল বিএনপিকে।

(দ্য রিপোর্ট/আরএইচ/নূরু/এনডিএস/এইচএসএম/ডিসেম্বর ১৪, ২০১৩)