দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : লেখক ও সাংবাদিক মোহাম্মদ এয়াকুব আলী চৌধুরী ১৯৪০ সালের ১৫ ডিসেম্বর ফরিদপুরে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি এয়াকুব আলী চৌধুরী নামে বেশি পরিচিত। বাঙ্গালী মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারে তার অগ্রগণ্য ভূমিকা রয়েছে।

এয়াকুব আলী চৌধুরী রাজবাড়ী জেলার পাংশার মাগুরাডাঙ্গা গ্রামে ১৮ কার্তিক ১২৯৫ বাংলা সনে ( ইংরেজি ১৮৮৮ সাল) জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা এনায়েতুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ অফিসার। পাংশা হাইস্কুল থেকে এমই এবং রাজবাড়ী সূর্যকুমার ইনস্টিটিউশন থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হলেও বিএ ক্লাসে পড়ার সময় দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে পড়ায় পড়ালেখা ছাড়তে বাধ্য হন।

প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় তার বড় ভাই মাসিক সাহিত্য পত্রিকা কোহিনূর (১৩০৫-১৩০৮, ১৩১১-১৩১৩, ১৩১৮-১৩১৯ ও ১৩২২) এর সম্পাদক রওশন আলী চৌধুরী অসুস্থ্ হয়ে পড়লে তিনি ঐ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব নেন। ১৯১৪-১৫ সালে চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ের জোরওয়ারগঞ্জ হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। এরপর রাজবাড়ী সূর্যকুমার ইনস্টিটিউশনে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯২০-২১ সালে পাংশা হাইস্কুলে শিক্ষকতাকালে অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনে যোগ দিলে ব্রিটিশ সরকার তাকে কারাদণ্ড দেয়। কারামুক্তির পর শিক্ষকতায় ইস্তফা দিয়ে কলকাতায় যান এবং মেজো ভাই আওলাদ আলী চৌধুরীর সঙ্গে সাংবাদিকতায় যোগ দেন। ১৯১১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আরো কয়েকজনের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি। এ সমিতির সম্পাদক হিসেবেও কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯২৬ সালে সমিতির মাসিক পত্র সাহিত্যিক এয়াকুব আলী চৌধুরী ও কবি গোলাম মোস্তফার যুগ্ম সম্পাদনায় এক বছর প্রকাশিত হয়।

এয়াকুব আলী চৌধুরী ব্যক্তিগত জীবনে চিরকুমার ছিলেন। রওশন আলী চৌধুরী ও আওলাদ আলী চৌধুরীর অকাল মৃত্যুতে তাদের পরিবারের দায়িত্ব তার উপর বর্তায়। যা তার উপর শারীরিক ও মানসিক চাপের সৃষ্টি করে। মাত্র ৪৭-৪৮ বছর বয়সে ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হন। শেষ জীবনের চার-পাঁচ বছর অসুস্থ অবস্থায় গ্রামের বাড়িতে বাস করেন। মৃত্যুর দুই বছর আগে বঙ্গীয় সরকার তার জন্য মাসিক ২৫ টাকা হিসেবে সাহিত্যিক বৃত্তি মঞ্জুর করেন।

ইসলামি দর্শন ও সংস্কৃতি তার রচনার মূল উপজীব্য। তিনি হিন্দু-মুসলমানের সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। বিশ শতকের প্রথম দিকে বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা বাংলা না উর্দু- এ বিতর্কে তিনি বাংলা ভাষার পক্ষ নিয়েছিলেন। চরিত্রবান মানুষ ও সুবক্তা হিসেবেও খ্যাত তিনি।

তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ধর্মের কাহিনী (১৯১৪), নূরনবী (১৯১৮), শান্তিধারা (১৯১৮) ও মানব মুকুট (১৯২৬) প্রভৃতি। এছাড়া বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘এয়াকুব আলী চৌধুরী অপ্রকাশিত রচনা’। নূরনবী বইয়ে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রশংসাবাণী রয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/ওএস/ডব্লিউএস/এমসি/ডিসেম্বর ১৫, ২০১৩)