ট্রাইব্যুনালে নিজের পক্ষে সাক্ষ্য দিলেন মোবারক
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক মোবারক হোসেন তার নিজের পক্ষে প্রথম সাফাই সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।
তিনি বলেন, ‘পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আমার বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়ের করা হয়েছে। আব্দুল হামিদ ও দারুল ইসলামের যোগসাজশে জনৈক খোদেজা বেগমকে দিয়ে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
রবিবার বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ দেওয়া সাক্ষ্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ১৯৭০ সালে আমি অষ্টম শ্রেণীতে পড়তাম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন জোরদার হতে শুরু করলে আমি নিয়মিত ক্লাসে যেতে পারতাম না। তখন আমি শারীরিকভাবে অসুস্থও হয়ে পড়ি।
মোবারক হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালের ৪ বৈশাখ পাকিস্তানী আর্মিরা নয়াদিল গ্রাম আক্রমণ করে প্রায় ৫০/৬০টি বাড়ি-ঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। তখন আমার ছোট চাচার বাড়িটিও পুড়ে যায়। ফলে আমার স্কুলের বইপত্রও পুড়ে যায়। এরপর আমি আমার গ্রামের বাড়ি সৈয়দাবাদে চলে যাই। পরবর্তীতে, আমার আম্মাকে নিয়ে আমার খালার বাড়ি সীমান্তবর্তী খারকুট গ্রামে যাই।
তিনি বলেন, এরপর খালার বাড়ি খারকুট গ্রামে দীর্ঘ ৮/৯ মাস আমরা অবস্থান করি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অন্যান্য লোকজনের সঙ্গে আমরাও নিজ গ্রামে চলে যাই।
জবানবন্দিতে মোবারক হোসেন বলেন, ১৯৭৩ সালে চাচার কথামতো নয়াদিল গ্রামে আমরা তিন ভাই মিলে একটি বাড়ি করি। একই সময় আব্দুল হামিদরা নয়াদিল গ্রামে তাদের মামার বাড়িতে বসবাস শুরু করে।
তিনি বলেন, এক সময় নয়াদিল গ্রামে মোবারকের চাচা ও হামিদের মামার মধ্যে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ঝগড়া বিবাদ চলতে থাকে। একবার গ্রামের হাজী বেলায়েত আলীর জমি মিথ্যা দলিল দিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে এতে অন্যান্য লোকজনের সঙ্গে আমিও বাধা দিই। সেই কারণে হামিদ জনৈক রিনা বেগমকে দিয়ে ২০০৭ সালে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। পরে ওই মামলা থেকে আমি বেকসুর খালাস পাই।
মোবারক বলেন, প্রসিকিউশন পক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দি অনুযায়ী নয়াদিল গ্রামে কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। বর্ণিত আমেনা বেগমও ধর্ষণের শিকার হয়নি।
আদালতে তিনি বলেন, আমার জন্ম ১৯৫৭ সালে। ১৯৭১ সালে আমি অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছিলাম। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের সাক্ষীরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সাক্ষ্য দিয়েছে। একাত্তরে আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করিনি। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ ও নিরীহ মানুষ।
তিনি বলেন, আমি মোগড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে এখনও বহাল আছি। আমার সদস্যপদ বাতিল করা হয়নি। আমি কখনও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমি মহামান্য ট্রাইব্যুনালের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করছি।
জবানবন্দি শেষে মোবারক হোসেনকে জেরা করেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান। জেরা শেষে পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি করেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ২৬ নভেম্বর মোবারকের পক্ষে তিন জন সাফাই সাক্ষীর অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে গত ২৫ নভেম্বর মোবারকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়।
গত ২০ মে থেকে মোবারকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এরপর এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রপক্ষের মোট ১২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।
মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে গত ২৩ এপ্রিল মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ আনা হয়। তার বিরুদ্ধে হত্যা, আটক, নির্যাতন ও অপহরণের পাঁচটি অভিযোগ এনে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।
এরপর গত ১৬ মে মোবারকের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট জাহিদ ইমাম।
মোবারক হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার নয়াদিল গ্রামের সাদত আলীর ছেলে। তিনি স্বাধীনতার পর জামায়াতে ইসলামীর ইউনিয়ন শাখার রোকন ছিলেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হলে এর কিছু দিন পর দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
একাত্তরে সংঘটিত একটি হত্যার অভিযোগে মোবারকের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা হয়।
পরে ২০১১ সালের ৯ অক্টোবর মোবারক হোসেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। মামলাটি পরে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এ মামলায় আটক হন মোবারক হোসেন।
(দ্য রিপোর্ট/এসএমএস/ নূরু/এমডি/ ডিসেম্বর ১৫, ২০১৩)