দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : জাতীয় দলের ফুটবলারদের পারফরম্যান্সের গ্রাফ ক্রমশ নিম্নমুখী। বছরজুড়ে মাঠে খেলা থাকলেও দর্শক টানার মতো খেলা উপহার দিতে পারছে না কোনো ক্লাব। ঘরোয়া ফুটবলে বিদেশিদের ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছেন দেশিয় প্রতিভাবান ফুটবলাররা। দেশি ফুটবলারদের মধ্যে পেশাদারিত্বের অভাব এর প্রধানতম কারণ। এ সংকট নিয়ে বর্তমান জাতীয় দলের বর্ষীয়ান ফুটবলার বিপ্লব ভট্টাচার্য জানিয়েছেন তার প্রতিক্রিয়া। কথোপকথনের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো দ্য রিপোর্টের পাঠকদের জন্য।

দ্য রিপোর্ট : বিশ্বকাপে খেলবে বাংলাদেশ, এই স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন। স্বপ্ন থেকে বেরুলে বাস্তবটা কিন্তু পুরো উল্টো। এই স্বপ্নটা কি আপনিও দেখছেন?

বিপ্লব ভট্টাচার্য : স্বপ্ন তো সবাই দেখে। সালাহউদ্দিন ভাই যে প্ল্যান হাতে নিয়েছেন তা সফল করতে পারলে স্বপ্নটা সত্যিও হয়ে যেতে পারে। এই লেভেলের ফুটবলারদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী একটা পরিকল্পনা রয়েছে তার। তবে পরিকল্পনার সঙ্গে টাকারও দরকার। পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এগিয়ে আসে; তাহলে স্বপ্নও সফল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সবার আগে প্রয়োজন পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করা।

দ্য রিপোর্ট : আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচ ঢাকায় আয়োজনে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছিল এক পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান। এ ম্যাচ থেকে আমরা কতটুকু লাভবান হয়েছি?

বিপ্লব ভট্টাচার্য : ওই ম্যাচে এটাই প্রমাণ হয়েছে দেশে মানুষ ফুটবল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। গ্যালারিতে উপচেপড়া দর্শক উপস্থিতি বুঝিয়ে দিয়েছে দেশের মানুষ ফুটবল ভালোবাসে। আমি মনে করি এ ম্যাচ থেকে অনেক কিছু শেখার ছিল।

দ্য রিপোর্ট : নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে আপনি ছিলেন সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। অথচ ডাচ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ একটি ম্যাচেও আপনাকে মাঠে নামার সুযোগ দিল না?

বিপ্লব ভট্টাচার্য : এখানে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। কাকে খেলাবে আর কাকে খেলাবে না এটা পুরো কোচের ইচ্ছা। বড় টুর্নামেন্টগুলোতে কিছু পেতে হলে তারুণ্যের সঙ্গে অভিজ্ঞারও দরকার রয়েছে। এ দেশে একজন কোচ কতদিনই বা সময় পান। সব ফুটবলারের খেলা দেখার সুযোগও হয় না অনেক কোচের।

দ্য রিপোর্ট : সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অনেক ফুটবলারের বিপক্ষে অভিযোগ রয়েছে পা বাঁচিয়ে খেলেছেন তারা। আপনার কাছে কি মনে হয়েছে?

বিপ্লব ভট্টাচার্য : এ অভিযোগটা সত্যি না। পা বাঁচিয়ে খেলতে কেউ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তোলেন না। সবাই চায় নিজের সেরাটা দিতে। আমার মতে ভালো ফল পেতে হলে ফুটবলে পেশাদারিত্ব আনতে হবে। ক্রিকেটের মতো ফুটবলারদেরও বেতনের আওতায় আনা যেতে পারে। কেউ খারাপ খেললে তাকে এ তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার নিয়ম করতে হবে। তাহলেই জাতীয় দলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে।

দ্য রিপোর্ট : দেরিতে হলেও জাতীয় দলের ফুটবলারদের জন্য হেলথ ইনস্যুরেন্সের কথা ভাবছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন?

বিপ্লব ভট্টাচার্য : এটা আগেই ভাবা উচিত ছিল। হেলথ ইনস্যুরেন্স করলে দীর্ঘমেয়াদী করা উচিত। দুই-একটা আসর কিংবা দুই-একটা ম্যাচের জন্য করে কোনো লাভ নেই। সালাহউদ্দিন ভাই আসার পর তো ফুটবলের জন্য অনেক কিছুই করেছেন। আমি তার সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছি সারা বছর মাঠে ফুটবল রাখাটাকে। এ কারণেই এখন আমরা খেলার সুযোগ পাই।

দ্য রিপোর্ট : ঘরোয়া ফুটবলে বিদেশিদের ভিড়ে দেশিয় খেলোয়াড়রা হারিয়ে যেতে বসেছেন; অথচ দেশে অনেক প্রতিভাবান ফুটবলার রয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার মত কি?

বিপ্লব ভট্টাচার্য : জাতীয় দলে আমাদের ফরোয়ার্ড সমস্যা। এমিলির বিকল্প খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মিডফিল্ডে মামুনুলেরও বিকল্প নেই। এই সমস্যাগুলো হয়েছে ঘরোয়া ফুটবলে অতিমাত্রায় বিদেশিদের খেলানোর ফলে। তাই আমি মনে করি বিদেশি ফুটবলারদের কোটা কমানো উচিত। একটা দল ৭ জন বিদেশি খেলোয়াড় আনার সুযোগ পাচ্ছে। খেলাচ্ছে ৪ জন, ৩ জনই বসে থাকছেন। এ জায়গায় যদি ভালো মানের ২ জন বিদেশি আনা হতো তাহলে আমরা তাদের কাছ থেকেও কিছু শিখতে পারতাম। অনেক ক্লাবই অল্প টাকায় নিম্নমানের ফুটবলার এনে খেলাটাই নষ্ট করে দিচ্ছে। এতে দেশি প্রতিভাবান ফুটবলাররা তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারছে না।

(দ্য রিপোর্ট/ওআইসি/নূরু/এএস/সিজি/ডিসেম্বর ১৫, ২০১৩)