দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান লেখক আর্থার সি ক্লার্ক। তার পুরো নাম আর্থার চার্লস ক্লার্ক। তিনি ১৯১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ইংল্যন্ডের সামারসেটের মাইনহেডের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

হাইশ গ্রামার স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। এর পর অর্থের অভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি বলে শিক্ষাবোর্ডে পেনশন অডিটর হিসেবে তিনি তার কর্মজীবন সূচনা করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি ‘রয়াল এয়ার ফোর্স’-এ রাডার বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ শুরু করেন। শৈশবে বিভিন্ন ম্যাগাজিনের কল্পবিজ্ঞানমূলক রচনা পড়তে ভালবাসতেন বলে, যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা থেকেই লিখে ফেলেন তার অবৈজ্ঞানিক কল্প উপন্যাস ‘গ্লাইড পথ’।

তার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় কেটেছে ‘গ্রাউন্ড কন্ট্রোল্ড এপ্রোচ (জিসিএ)’-তে, যার অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটেছে এ উপন্যাসে। যুদ্ধে জিসিএ’র বাস্তবিক প্রয়োগ না থাকলেও, ১৯৪৮ থেকে ১৯৪৯ সালের বার্লিন এয়ারলিফটিং-এর উন্নয়নে এটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

আর্থার কর্পোরাল হিসেবে তার কর্মজীবনের সূচনা করলেও ১৯৪৩ সালের ২৭ মে তিনি কারিগরি বিভাগের পাইলট অফিসার হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ঠিক ছয় মাস পর ২৭ নভেম্বর তিনি ফ্লাইং অফিসার হিসেবে আরেক দফায় পদোন্নতি লাভ করেন। এ সময় তিনি ‘রয়াল এয়ার ফোর্স’ এর প্রধান ট্রেনিং নির্দেশক হিসেবে দায়িত্বও পালন করেন।

যুদ্ধ শেষে লণ্ডনের ‘কিংস কলেজ’ থেকে আর্থার সি ক্লার্ক গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

যুদ্ধ শেষ হওয়ার কয়েক বছর পর ১৯৪৬-১৯৪৭ ও ১৯৫১-১৯৫৩ সালের সময়ে তিনি ‘ব্রিটিশ ইন্টারপ্লেনেটারি সোসাইটি’ এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যদিও তিনি ‘জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট’ ধারণার প্রবর্তক ছিলেন না, তথাপি আদর্শ টেলিযোগাযোগ সম্প্রচার পরিকল্পনাতে তার অবদান গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৪৫ সালে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় বিআইসি’র শীর্ষস্থানীয় কারিগরি সদস্যদের কাছে তিনি এ পরিকল্পনার কাগজ জমা দেন। যা একই বছরে ‘ওয়্যারলেস ওয়্যার্ল্ড’ অক্টোবর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। তিনি অবশ্য অসংখ্য অবৈজ্ঞানিক উপন্যাসে মহাশূন্যযান ও মহাশূন্য অভিযান সম্পর্কিত কারিগরি ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কথা বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে ‘দ্য এক্সপ্লোরেসন অব স্পেস’ ও ‘দ্য প্রমিজ অব স্পেস’ উল্লেখযোগ্য। এর স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিকাল ইউনিয়ন’ বিষুবরেখার প্রায় ৩৬,০০০ কিলোমিটার (২২,০০০ মাইল) উপরে স্থাপিত জিওস্টেশন্যারি অরবিটকে ‘ক্লার্ক অরবিট’ নামে নামকরণ করেছে।

১৯৫৩ সালে ফ্লোরিডা ভ্রমণে গেলে আর্থার ২২ বছর বয়সী এক বিধবা ও এক পুত্র সন্তানের জননী ম্যারিলিন মেফিল্ডের সাথে পরিচিত হন এবং তাকে বিয়ে করেন। ১৯৬৪ সালে তাদের মধ্যে স্থায়ী বিচ্ছেদ ঘটে।

সত্তরের দশকে তিনি তিনটি বই প্রকাশের চুক্তি করেন এক কোম্পানির সঙ্গে। যা তখন পর্যন্ত কোন কল্পবিজ্ঞান লেখকের সর্বোচ্চ রেকর্ড। চুক্তিকৃত তিনটি বইয়ের প্রথম ‘রন্ডেজভোয়াস উইথ রামা’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে।

১৯৮০ সালের দিকে ‘আর্থার সি ক্লার্কস মিস্টেরিয়াস ওয়্যার্ল্ড’ ‘আর্থার সি ক্লার্কস ওয়্যার্ল্ড অব স্ট্র্যঞ্জ পাওয়ার’ ও ‘আর্থার সি. ক্লার্কস মিস্টেরিয়াস ইউনিভার্স’ টেলিভিশন অনুষ্ঠানগুলো সারা পৃথিবী জুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

১৯৮৯ সালে রাণী এলিজাবেথের জন্মদিনে তাকে ‘কমান্ডার অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (সিবিই)’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। ২০০০ সালের ২৬শে মে সাহিত্যকর্মে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে ‘নাইট ব্যাচেলর’ সম্মাননা দেওয়া হয়।

দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টের সমস্যা ও হৃদযন্ত্রজনিত সমস্যায় ভোগার পর ২০০৮ সালের ১৯ মার্চ তার মৃত্যু হয়।

(দ্য রিপোর্ট/ এমএইচও/ এমডি/ ডিসেম্বর ১৬, ২০১৩)