রাজনৈতিক পরিস্থিতি : কী জানি কী হয়!
অন্য সময় গভীর রাত পর্যন্ত কর্মচঞ্চল মানুষের উপস্থিতি দেখা গেলেও ২৫ আক্টোবর ঘিরে সহিংসতার আশংকায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে থমকে যায় ঢাকা।
চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিশেষ করে শুক্রবার দেশে কী ঘটতে চলছে সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশের মানুষ। ঢাকার অস্থায়ী কর্মজীবীদের অনেকেই ঈদের পর আত্মীয়-স্বজনকে ছেড়ে ঢাকায় ফেরেনি। যারাও ফিরেছেন তাদের অনেকেই আবার এ পরিস্থিতিতে ফিরে যাওয়ার চিন্তা করছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সরেজমিনে রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, সেগুনবাগিচা, নিউমার্কেট, মিরপুর, ধানমন্ডি, শাহবাগ, ফার্মগেট, রামপুরা, বাড্ডা, পুরাতন ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যানবাহনের চলাচল ছিল অস্বাভাবিক রকম কম। রাস্তা-ঘাটে মানুষের উপস্থিতি ছিল কম। আবার যানবাহন কম থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় অপেক্ষমান যাত্রীদের। এছাড়া, ঢাকার সর্বত্র আইন-শৃ্ঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক দৃষ্টি ছিল চোখে পড়ার মতো।
এদিকে, ২৫ অক্টোবর ঘিরে সারা দেশে চলে গ্রেফতার অভিযান। পুলিশ সদর দফতরের হিসেব অনুযায়ী ২২ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর রাত পর্যন্ত আটকের সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। এর মধ্যে কয়েকজন মামলার আসামি হলেও অধিকাংশই ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মী।
রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তার জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করার পর জনমনে আতঙ্ক আরো বেড়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শর্তসাপেক্ষে ১৮ দলকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। অপরদিকে গতরাতেই রাজধানী দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির শীর্ষপর্যায়ের নেতারা শুক্রবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মসজিদ ও রাজপথে অবস্থান নিতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। দুই দলের এমন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি জনমনে আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে।
জানা গেছে, প্রধান দুটি দলের এমন ঘোষণার পর নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশও আতঙ্কে আছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, দুটি দল মুখোমুখী হলে অবস্থা বেগতিক হবে। আর পুলিশ অ্যাকশনে গেলে সব দায় এসে পড়বে পুলিশের উপর। তিনি আরো বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে পুলিশি তল্লাশি অব্যাহত আছে। ফলে জনগণ আরো বেশি আতঙ্কে ভুগছেন।
শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন মাকে দেখতে টিকাটুলিতে গাড়ীর অপেক্ষায় ছিলেন ব্যাংকার লায়লা আখতার। তিনি বলেন, মা হাসপাতালে ভর্তি। তাকে দেখতে যাবো কিন্তু কোনো গাড়ী পাচ্ছি না। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের কারণে আমরা স্বস্তিতে নেই। বাইরে বের হতে ভয় লাগে। কী জানি কী হয়! তারপরও মাকে দেখতে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনের ফুটপাতের কাপড় ব্যবসায়ী আনিস। দিরিপোর্ট২৪কে তিনি জানান, ভাই চরম বিপদে আছি। বর্তমানে দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা যেখানে বিপদে আছেন সেখানে আমার মতো ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের কথা বাদ দেন। ব্যবসা নেই, চিন্তা করছি বাড়ি ফিরে যাবো। পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার ফিরে আসবো।
তিনি বলেন, এর আগে একবার আগুনে পুড়েছে এবার পুড়লে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বো।
কারওয়ান বাজারের কুলি মনসুর; বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ট্রাক ভর্তি তরকারি মাথায় করে আড়তে পৌঁছানোর কাজ করেন তিনি। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, ‘দেশে গণ্ডগোল হয়, মারামারি হয়, কোন নেতা মরে না। মরে আমাদের মতো গরীব মানুষ।’
তিনি আরো বলেন, ‘পেটের দায়ে জীবনের মায়া না করে ঢাকায় কাজ করতে এসেছি। বাড়ির লোকেরা চিন্তিত, তাগাদা দিচ্ছে বাড়ি ফিরতে। অবস্থা খারাপ হলে বাড়ি চলে যাবো।’
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সমাজ বিজ্ঞানী অধ্যাপক পিয়াস করিম দিরিপোর্ট২৪ বলেন, দুই দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে শুধু রাজধানীবাসী নয়, দেশের আপমর জনগণ আতঙ্কে আছেন। তারা জানেন না, আজ বাদে কাল কী হতে চলেছে।
তিনি আরো জানান, আমার অনেক পরিচিতজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা অনেকেই দু-তিন সপ্তাহের বাজার একসঙ্গে করে রেখেছেন। সবার মনে আতঙ্ক। অনেকেই গাড়ী নিয়ে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। আবার রিকশা বা বাসে চড়ে কোথাও যাবেন সে ভরসাও করতে পারছেন না। সবার মনেই আতঙ্ক, ‘কী হবে দেশে, কী হচ্ছে দেশে?’
পিয়াস করিম বলেন, ‘জনগণের এ আতঙ্কের কথা যদি দুই নেত্রী বুঝতেন তা হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো। দেশের সবার মতো আমিও শংকিত, কী হতে চলেছে আগামীতে?’
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, আতঙ্কের কিছু নেই। রাজধানীতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইন ভঙ্গ করে যদি কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে।
তিনি নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন।
(দিরিপোর্ট২৪/ওএস/এমএআর/এমডি/অক্টোবর ২৫, ২০১৩)