সীমান্ত দিয়ে আসছে মাদক ও অস্ত্র
দিনাজপুর সংবাদদাতা : দিনাজপুর জেলার সীমান্ত এলাকাগুলো দিয়ে মাদকের সঙ্গে আসছে বিভিন্ন ধরনের বিদেশি অস্ত্র। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চোরাকারবারিরা মাদক পারাপারের সঙ্গে বিপুল পরিমাণে বিদেশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ তৈরির সরঞ্জাম পার করছে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তারা এ কাজ করছে।
দিনাজপুর জেলার তিনপাশ ঘিরে রয়েছে ভারতীয় সীমান্ত। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে মাদক ব্যবসায়ী ভারতীয় চোরাকারবারিদের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র-গোলাবারুদ ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে পারাপার করছে।
দিনাজপুর জেলার সেতাবগঞ্জ উপজেলা থেকে শুরু করে বিরল, সদর উপজেলা, ফুলবাড়ী, বিরামপুর ও হিলি সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অবাধে আসছে মাদক ও অস্ত্র-গোলাবারুদ এবং বোমা তৈরির সরঞ্জাম। মাদক ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা পাওয়ার লোভে এখন মাদকের সঙ্গে অস্ত্র ও গোলাবারুদ তৈরির সরঞ্জাম ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। এরই মধ্যে চলতি বছর ডিবি পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে। জেলার বিভিন্ন সীমান্তের পয়েন্ট দিয়ে আসা যেসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ তৈরির সরঞ্জাম আসছে, তা দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বলে মাদক ব্যবসায়ীদের একটি সূত্রে জানা যায়।
দিনাজপুর জেলার সীমান্ত এলাকাগুলোর মধ্যে সদর উপজেলার দাইনুর, সুন্দরা, হাকিমপুর উপজেলার হিলি, চিরিরবন্দর উপজেলার মণ্ডলপাড়া সীমান্ত এলাকা মাদক ও অস্ত্র-গোলাবারুদ ব্যবসায়ীদের একটি নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। মাদক ও অস্ত্র-গোলাবারুদ তৈরির সরঞ্জাম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশি মোবাইল ফোন কোম্পানির সিম ব্যবহার করছে চোরাচালান কাজে স্বল্প খরচে ও দ্রুত যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষা বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা মাদক ব্যবসায়ীদের মালামাল সীমান্তের ওপার থেকে পার করার জন্য প্রতিটি সীমান্ত এলাকায় লাইনম্যানের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে থাকে। এ সব লাইনম্যান সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিজিবির টাকা উত্তোলন করে থাকে। যদি কোনো ব্যবসায়ী লাইনম্যানকে টাকা দিতে অস্বীকার করে তাহলে তার মালামাল বিজিবি সদস্যরা আটক করে।
এ ছাড়া বিজিবি সদস্যদের মাঝেমধ্যেই লোক দেখানো অভিযানের অভিযোগ করে দিনাজপুর সদর উপজেলার একাধিক ব্যক্তি বলেন, সীমান্ত এলাকা দিয়ে মাদক-অস্ত্রসহ বিভিন্ন দ্রব্য অবৈধভাবে আসছে অর্থের বিনিময়ে আর আমরা রাস্তার ওপর দিয়ে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারি না। খানপুর-সুন্দরা এলাকার পাকা রাস্তার ওপর দিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি অফিস, বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানির লোকজন চলাচল করলে বিজিবি সদস্যরা অহেতুক হয়রানি করে আটকে রেখে সময়ক্ষেপণ করে। যদি কেউ প্রতিবাদ করে তাহলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, বিজিবি সদস্যরা অনুমতি না দিলে একটা ভারতীয় সুই বাংলাদেশে আনা সম্ভব না। প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে শাস্তি ও অহেতুক হয়রানি বা সময়ক্ষেপণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সদর উপজেলার সাধারণ মানুষ।
হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিনিয়তই প্রকাশ্যে দিবালোকে মাদক থেকে শুরু করে যাবতীয় মালামাল পার হচ্ছে। আর হিলিতে চোরাচালানি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নারী ও শিশুরা। হিলি স্টেশনের ওপর দিয়ে যেসব ট্রেন যাতায়াত করে তার সবগুলোতে মাদকসহ বিভিন্ন ভারতীয় মালামাল বহন করা হয়।
এ ছাড়া প্রতিটি ট্রেনে বিজিবির টাকা উত্তোলনকারী লাইনম্যান নিয়োগ দেওয়া রয়েছে। এভাবেই প্রতিনিয়তই মাদকসহ ভারতীয় বিভিন্ন মালামালের সঙ্গে আসছে অস্ত্র-গোলাবারুদ ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক, অস্ত্র, গোলাবারুদ বা বোমা তৈরির সরঞ্জাম আসা যদি বন্ধ না হয়, তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি হুমকির মুখে পড়বে।
(দ্য রিপোর্ট/এমআইআর/এপি/শাহ/এএস/ডিসেম্বর ১৭, ২০১৩)