হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতি
‘জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করার কর্মকাণ্ড বন্ধ হওয়া উচিৎ’
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের সাধারণ মানুষের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করার মতো কর্মকাণ্ড বন্ধ করা উচিৎ বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে বাংলাদেশে মানুষ হত্যার বহু নজির আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা সাধারণ মানুষ যাদের রাজনীতির সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতাই নেই, তারাই এ সব হামলার শিকার হন।’
মঙ্গলবার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে বাংলাদেশ সরকারের নিরপত্তাবাহিনীকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ও অতিরিক্তি বলপ্রয়োগ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া উচিত।
এছাড়া জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলেরই তাদের সমর্থকদের সহিংসতা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া উচিত বলে ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সহিংসতার ব্যাপারে দ্রুত, কার্যকর ও নিরপেক্ষ তদন্তের লক্ষ্যে সরকারের একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা উচিত। ওই সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের আটক করা উচিত।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী সম্প্রতি বিরোধী দলের কর্মীদের কঠোরভাবে দমন করছে। জামায়াতের সমর্থকরা পুলিশ স্টেশন, সরকারি ভবন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালাচ্ছে।
গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে হিউম্যান রাইট ওয়াচ বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় বিরোধী দলের কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে আরো অনেককে।
বিবৃতিতে ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনী ও বিরোধী দল পরস্পরের প্রতি হামলা চালানোর এক পঙ্কিল চক্রে আটকা পড়েছে। এর ফলে মৃত্যু, ধ্বংস ও শঙ্কার দিকে এগুচ্ছে দেশ।’
তিনি আরো বলেন, ‘জামায়াত ও বিরোধী দলের হয়তো আন্দোলন করার বৈধ কারণও আছে। তবে, তাদের সমর্থকদের এমন ভয়াবহ মাত্রায় সহিংসতা করার কোনো যুক্তিই নেই।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, আসন্ন নির্বাচন ও যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে গত দুই মাসের সহিংসতায় বাংলাদেশে শতাধিক মানুষ নিহত ও কয়েক শ’ মানুষ আহত হয়েছেন। ডিসেম্বরের ১২ তারিখে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার পর এ সহিংসতা আরো তীব্র হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, সরকারের উচিত নিরাপত্তা বাহিনীকে জাতিসংঘের শক্তি প্রয়োগ ও অস্ত্র ব্যবহারের মূলনীতি বিষয়ক দলিল (Basic Principles on the Use of Force & Firearms by the Law Enforcement Officials) অনুসরণের নির্দেশ দেওয়া।
জাতিসংঘের এই নীতির আওতায় নিরাপত্তাবাহিনীকে বল ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের আগে অসহিংস উপায়ে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করার কথা বলা হয়েছে। আর যদি বল ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ঠেকানো না যায় তাহলে যত সম্ভব কম হতাহতের বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে।
নিউইয়র্ক ভিত্তিক এ মানবাধিকার সংস্থাটি বিরোধী দলেরও বেশ কয়েকটি ভয়াবহ সহিংসতার চিত্র লিপিবদ্ধ করেছে বলে ওই বিবৃতিতে জানিয়েছে।
ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের এক চিকিৎসকের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, পেট্রোল বোমা হামলার শিকার ৮৩ জনকে সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৪ জন মারা গেছেন।
হামলার শিকার অনেকেই হিউম্যান রাইটসকে জানিয়েছে হামলাকারীদের তারা দেখেনি। আবার অনেকেই জানিয়েছে, বিরোধী দলের সমর্থকরাই হামলা চালিয়েছে।
জামায়াত ইসলামীর শাখা শিবিরের সদস্য ও বিএনপির সমর্থকরা নিরাপত্তা বাহিনী ও সাধারণ মানুষেরে ওপর অসংখ্য হামলা চালিয়েছে বলে ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
ককটেলের আঘাতে অনেক শিশু নিহত ও আহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
(দ্য রিপোর্ট/ কেএন /শাহ/এমডি/ ডিসেম্বর ১৭, ২০১৩)