জীবন্ত খাবার
কামরুননাহার, দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : মানুষ সর্বভূক প্রাণী। উদ্ভিদ থেকে প্রাণী— মানুষের খাদ্য তালিকায় বাদ নেই কোনো কিছুই। নতুন নতুন রন্ধনপ্রণালি আবিষ্কারেও মানুষের জুড়ি নেই। তাই বলে জ্যান্ত কোনো প্রাণী খেয়ে ফেলাটা একটু আজবই বটে। যদি আপনার প্লেটে খাবারটি বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যায় তাহলে কি আপনি খেতে পারবেন? মানুষের খাদ্য তালিকায় থাকা কিছু জ্যান্ত খাবার নিয়ে এই আয়োজন-
কাসু মারজু
ভেড়ার দুধের পনির দিয়ে তৈরি করা হয় কাসু মারসু। ইতালির সার্দিনিয়া দ্বীপের ঐতিহ্যবাহী এ খাবারটি যৌন আগ্রহ বাড়িয়ে দেয় বলে বিশ্বাস করে স্থানীয় বাসিন্দারা।
তবে এই খাবার তৈরি করতে বেশ কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়। প্রথমে পনিরপ্রিয় মাছিদের আকর্ষণ করার জন্য বেশ কিছুদিন পনির খোলা অবস্থায় রাখা হয়। পনিরের ওপর মাছিগুলো হাজার হাজার ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে জন্ম নেয়া লার্ভাগুলো বড় হয় পনিরের মধ্যেই। এতে পনির হয় আরো নরম। ব্যস এভাবেই তৈরি হয় কাসু মারসু।
মনে রাখতে হবে লার্ভাগুলো জীবন্ত থাকতে থাকতেই খেতে হবে কাসু মারসু। লার্ভাগুলো মরে গেলে আর খাবার উপযোগী থাকবে না এটা। আর খাবার সময় চোখে চশমা পরে নেয়া ভালো। কারণ জীবন্ত এ লার্ভাগুলো প্রায় আধ ফুট উঁচু পর্যন্ত লাফ দিতে পারে। তাই লার্ভাগুলো লাফ দিয়ে সোজা চোখে চলে গেলেও অবাক হওয়া্র কিছু নেই।
এই খাবারের কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। এটি খাবার পর অ্যালার্জি হতে পারে, বমি ও মারাত্মক ডায়রিয়াও হতে পারে। তারপরও মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়ে যাচ্ছে কাসু মারসু।
মদ্যপ চিংড়ি
পৃথিবীতে নিষ্ঠুর উপায়ে তৈরি ১০টি খাবারের মধ্যে এটা অন্যতম। চীনের এই খাবারটি খুবই জনপ্রিয়। মাত্র ৩০ সেকেন্ডেই তৈরি করা যায় মদ্যপ চিংড়ি। তাই এই খাবারটির নামের সঙ্গে জুটেছে ব্যাচেলরদের স্বপ্নের খাবারের তকমা। এটি তৈরি করতে প্রথমে জ্যান্ত চিংড়ি চীনা হোয়াইট ওয়াইন ‘বাইজিউ’ দিয়ে মেরিনেট করে রাখা হয়। তারপর আধাসিদ্ধ করা হয়। অনেক সময় সিদ্ধ না করেও খাওয়া হয়।
তবে অসিদ্ধ কিংবা অর্ধসিদ্ধ এই খাবার খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে মানুষ। তারপরও বিশ্বব্যাপী মদ্যপ চিংড়িকে খুব মজাদার খাবার মনে করা হয়।
ইকিজুকুরি
জাপানের কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে সামনে থাকা অ্যাকুরিয়াম থেকে যে কোনো সামুদ্রিক মাছ দেখিয়ে দিলে এক মিনিটের মধ্যেই টেবিলে হাজির হবে জীবন্ত মাছ। ইকিজুকুরি মানে হলো ‘জীবন্ত তৈরি খাবার’। তবে এই খাবার তৈরি করতে খুব দক্ষতার প্রয়োজন হয়।
জীবন্ত ঝিনুক
বিশ্বব্যাপী এটা দারুণ জনপ্রিয় একটি খাবার। কাসু মারসুর সঙ্গে এই খাবারের মিল রয়েছে। কারণ ঝিনুক জীবন্ত অবস্থাতেই খেতে হয়। আর এই খাবারটিও যৌন আগ্রহ বাড়িয়ে দেয় বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন। ভিটামিন ও মিনারেলের অন্যতম উৎস এ খাবারটি উপকূলীয় অঞ্চলে অনেক জনপ্রিয়।
জীবন্ত ঝিনুক খাওয়ার কারণে ভিব্রিও ভুলনিফিকাস সেপ্টিসিমিয়া নামে রক্তের প্রদাহজনিত রোগে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।
সাননাকজি
জীবন্ত বাচ্চা অক্টোপাস টুকরো টুকরো করে তিল ও তিলের তেল দিয়ে তৈরি হয় এই খাবার। কোরিয়ায় এই খাবার খুব জনপ্রিয়। তবে এটা খাবার আগে ভালো করে চিবিয়ে নিতে ভুলবেন না। কারণ কিলকিলে এ খাবার গলায় আটকে আপনার মৃত্যুও হতে পারে। আর খাওয়ার সময় সাবধান থাকবেন। কারণ অক্টোপাসের জ্যান্ত শুঁড়গুলো আপনার প্লেট থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
ইয়াং ইয়াং ফিস
খুবই নিষ্ঠুর উপায়ে তৈরি করা হয় চীনের এই খাবার। জীবন ও মৃত মাছ নামেই এই খাবারটি বেশি পরিচিত। জীবন্ত মাছটির শরীরের নিচের অংশ ভেজে সস মাখিয়ে তৈরি করা হয় এই খাবার। মাছটির নিচের অংশ যখন আপনি খেতে থাকবেন তখনও এর মুখ নড়তে থাকবে। বিষয়টি নিশ্চয় খুবই নিষ্ঠুর। যখন আপনি একটি প্রাণীর মাংস খাচ্ছেন, তখন প্রাণীটি আপনার দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে রয়েছে। বিষয়টি ভাবলেই শিউরে উঠতে হয়!
খাদ্য তালিকায় জীবন্ত প্রাণী যোগ করা নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিতর্কের কমতি নেই। নিষ্ঠুরতা ছাড়াও এ ধরনের খাবারে রয়েছে স্বাস্থ্যহানি এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকিও। তারপরও কমেনি জীবন্ত খাবারের জনপ্রিয়তা।
(দ্য রিপোর্ট/কেএন/এইচএসএম/রাসেল/ডিসেম্বর ১৭, ২০১৩)