জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট : বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তা হচ্ছে বিশেষ মুহূর্তের সহযোগিতা বা ইমিডিয়েট রেসপন্স মেকানিজম (আইআরএম) পদ্ধতি। এর ফলে দেশের চরম অর্থনৈতিক সংকটে দ্রুত অর্থ সহায়তা করবে সংস্থাটি।

এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কোন ধরনের প্রকল্পের উন্নয়ন, প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) এ পদ্ধতির বিষয়টি অন্তভুর্ক্ত করা হবে সে বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব আরাস্তু খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের আইআরএম বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক সংবাদ। এই আইআরএম-এর আওতায় প্রকল্পের অর্থ ছাড় হয়নি এমন ৫ শতাংশ অর্থ ব্যবহার করা যাবে। সে হিসেবে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা বা ২০ কোটি মার্কিন ডলার এ পদ্ধতিতে পাওয়া সম্ভব। যা অন্য যে কোন খাতে সরকার ব্যয় করতে পারবে। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্প থেকে এই অর্থ নেয়া হবে। এই অর্থ আইডিএ থেকে নেয়ার কারণে সার্ভিস চার্জ মাত্র দশমিক ৭৫ শতাংশ। সংকট কেটে গিয়ে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলে আবার কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে এই অর্থ ফেরত দিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত প্রয়োজন। কারণ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) সংকটকালীন অর্থ পাওয়ার বিষয়টি সংযুক্ত করবে মূলত তারাই।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, বাংলাদেশে এটি একেবারেই নতুন। এর ফলে অতি অর্থনৈতিক সংকট কিংবা অতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সংস্থাটির প্রতিশ্রুত অর্থ (যা ছাড় হয়নি) সেখান থেকে দ্রুত অর্থ পাওয়া যাবে। কিংবা এক প্রকল্পের টাকা ওই সময় আপৎ মোকাবেলায় ব্যয় করা হবে। এটি একটি বড় সুযোগ বলে মনে করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। কার্যকর হলে পাইপ লাইনে থাকা প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড়ের পরিমাণ বেড়ে যাবে।

প্রস্তাবিত আইআরএম পদ্ধতি কিভাবে কার্যকর করা যায় সে বিষয়ে গত মাসে বিশ্ব ব্যাংকের দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেছে। এ সময় তারা পরিকল্পনা কমিশন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং অথনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকগুলোতে ব্যাপক আলোচনার পর এ পদ্ধতি কার্যকর করার জন্য কাজ শুরু করে সরকার।

এ বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আইআরএম পদ্ধতিটি বাংলাদেশের জন্য নতুন হলেও বিশ্বব্যাংকের জন্য নতুন নয়। কেননা ইতোমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি চালু রয়েছে। ওই সব দেশে এ পদ্ধতির সুফল পাওয়া যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশের জন্য এটির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আশা করছি শিগগির এটি কার্যকর হবে।

আপৎকালীন অর্থছাড়ের প্রক্রিয়া বিষয়ে সূত্র জানায়, এ পদ্ধতিতে দুর্যোগকালীন সময়ে দ্রুত টাকা পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত হলে তা বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের অনুমতি নিয়ে সংস্থাটি অর্থ দিতে পারবে। সব প্রক্রিয়া ২ সপ্তহের মধ্যে শেষ করা হবে। আগামিতে নির্দিষ্ট প্রকল্পে আইআরএম রাখা হবে বলেও জানা গেছে।

বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় মোট ৩৪টি প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। এতে গত ২০১১-১২ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত সংস্থাটির মোট সহযোগিতার ৩৯৪ কোটি ২৩ লাখ ডলার অর্থ ছাড় হয়নি। এর মধ্যে ৩৯৩ কোটি ৩৩ লাখ ডলার ঋণ এবং বাকি ৯০ লাখ ডলার অনুদান। এই অর্থের ৫ শতাংশ সরকার দেশের অর্থনৈতিক সংকটে ব্যবহার করতে পরবে। সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের বোর্ড সভায় স্বল্পতম সময়ে বা অর্থনৈতিক সংকট পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আইআরএম ব্যবস্থাপনায় অর্থ দেয়ার বিষয়ে অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এ বিষয়ে গত সপ্তাহে পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে অথর্নৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ইআরডির অতিরিক্ত সচিব আরাস্তু খান। সেখানে আইআরএম পদ্ধতি বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবের সময় এ বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন এতে সম্মত হয়েছে বলে সভাসূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের এই ধরনের সহযোগিতার খুব প্রয়োজন। কেননা জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে দিন দিন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আইআরএম কার্যকর করা গেলে সরকারের বিনিয়োগ ক্ষমতা বাড়বে।

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা মিশন সূত্রে জানা গেছে, এর আগে বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের সময় হাইতি এই ধরনের সহযোগিতা পায়। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাহায্যের জন্য বলা হলে আইআরএম ব্যবস্থাপনার আওতায় সহযোগিতার জন্য বিশ্বব্যাংক প্রস্তাব দেয়।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এমসি/রাসেল/নূরু/ডিসেম্বর ১৭, ২০১৩)