২৪ ডিসেম্বর শাপলা চত্বরে সমাবেশ
শক্তি প্রদর্শনের প্রস্তুতি হেফাজতের
আগামী ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে পূর্বঘোষিত সমাবেশ সফল করতে সংগঠিত হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম। প্রস্তুতি নিচ্ছে বড় ধরনের লোক সমাগমের। ওই দিন আবারো শক্তি প্রদর্শনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কওমি মাদরাসা ভিত্তিক এই সংগঠনটি।
সমাবেশ সফল করতে ঢাকা মহানগরসহ জেলা-উপজেলা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা ও কর্মী সমাবেশ করছে সংগঠনটি। যদিও এখন পর্যন্ত অনুমতি মেলেনি সমাবেশের।
তবে নেতারা বলছেন, শাপলা চত্বরে না দিলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেবে সরকার। শেষ পর্যন্ত যদি অনুমতি না মেলে তাহলে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন তারা।
হেফাজত সূত্র জানিয়েছে, ২৪ ডিসেম্বর পূর্বঘোষিত শাপলা চত্বরে বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে গত ১ ডিসেম্বর থেকে মাঠ পর্যায়ে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে কাজ করছেন নেতারা। কওমি মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের পাশাপাশি স্থানীয় সাধারণ মানুষকেও সমাবেশে জমায়েত করতে প্রচারণা চালাচ্ছে হেফাজত। এছাড়াও ঢাকা বিভাগের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় প্রস্তুতি সভা করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ হলেও ঢাকার বাইরে থেকে বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলা থেকে ২৪ ডিসেম্বরের সমাবেশে লোক আনার বিষয়টিও মাথায় রেখেছেন শীর্ষ নেতারা। দীর্ঘদিন চাপে থাকা এ সংগঠনটির নেতাকর্মীরা আবারো আলোচনায় আসতে চায় বড় ধরনের জমায়েত ঘটিয়ে।
এ ব্যাপারে বিএনপি-জামায়াতের স্থানীয় নেতারা হেফাজতের কর্মসূচি সফলে সহযোগিতা করছেন বলে জানা গেছে।
হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব দ্য রিপোর্টকে জানান, চলতি বছরের ৬ এপ্রিল ও ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে বিপুল মানুষের সমাগম হয়েছিল। এবার সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহটা আরো বেশি। ২৪ ডিসেম্বর সমাবেশে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে লোক সমাগম বেশি হবে। এ জন্য প্রতিদিন ঢাকা মহানগরীতে সভাসমাবেশ ও প্রস্তুতিমূলক নানা বৈঠক হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জুনাইদ আল হাবিব বলেন, শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অনুমতি পাওয়া যায়নি। অনুমতির ব্যাপারে পুলিশ গড়িমসি করছে। সমাবেশের অনুমতি দেয়া না হলে কঠোর অবস্থানে যাওয়া হবে।
কঠোর অবস্থানটা কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে হেফাজতের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘সেটা আমরা আলোচনার মাধ্যমেই ঠিক করবো।’
হেফাজতের ঢাকা মহানগরীর অন্যতম নেতা ও খেলাফত আন্দোলনের মহানগরী সভাপতি মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, কর্মসূচি সফল করতে মহানগরীর প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ঘরোয়া বৈঠক হচ্ছে।
সংগঠনটির ঢাকার প্রচার সেলের প্রধান মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াসেল বলেন, গত ৩০ নভেম্বর সমাবেশের অনুমতি চেয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অনুমতি দেয়া হয়নি। সমাবেশের অনুমতি না দিলে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন তারা।
হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা জাফরুল্লাহ খান বলেন, ২৪ ডিসেম্বরের সমাবেশ সফল করতে ঢাকা মহানগরসহ ঢাকা বিভাগের সব জেলা-উপজেলা ও তৃণমূল পর্যায়ে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তৃণমূলে এ ব্যাপারে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ওই দিন বিপুল সংখ্যক তৌহিদী জনতা ঢাকার সমাবেশে যোগ দেবে।
সমাবেশের অনুমতি পাওয়া গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জাফরুল্লাহ খান বলেন, পুলিশের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আশা করছি পাব। কারণ হেফাজত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। সরকার যদি শাপলা চত্বরে সমাবেশের অনুমতি না দেয় তাহলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা অন্য যে কোন জায়গায় অনুমতি দিলেও এতে আমাদের আপত্তি থাকবে না।
অনুমতি না দিলে পরবর্তী কর্মসূচি কী?-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যদি নাই-ই দেয়া হয় তাহলে সরকারের একদিন কি আমাদের একদিন।’
হেফাজতে ইসলামের উপদেষ্টা ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী দ্য রিপোর্টকে বলেন, সরকার এখন পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। শেষ পর্যন্ত অনুমতি মিলবে আশা করছি।
উল্লেখ্য, পূর্বঘোষিত ১৩ দফা দাবির বাস্তবায়ন, গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি ও ‘কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৩’ পাসের চেষ্টার প্রতিবাদে ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় হেফাজতে ইসলাম।
এর আগে গত ১৫ নভেম্বর শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে পরবর্তীতে ওই দিন পবিত্র আশুরা এবং তাবলীগ জামায়াতের কর্মসূচি থাকায় পিছু হটে হেফাজত।
চলতি বছরের ৬ এপ্রিল ঢাকার শাপলা চত্বরে প্রথম মহাসমাবেশ করে কওমি মাদরাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। বিপুল সংখ্যক মানুষের জমায়েত ঘটিয়ে প্রথম আলোচনায় আসে সংগঠনটি। পরবর্তীতে গত ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি পালন শেষে শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে তারা।
ওই দিন বিকেল থেকে পরদিন বিকেল পর্যন্ত রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজত কর্মীরা। দুই দিনে বহু মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটে। যদিও এ নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ পাল্টাঅভিযোগ।
শাপলা চত্বরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অধিকাংশ শীর্ষ নেতা গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান। সাংগঠনিক অবস্থাও নড়বড়ে হয়ে পড়ে সংগঠনটির। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে বৈঠকও করতে পারছিলেন না নেতারা।
(দ্য রিপোর্ট/কেএ/নূরু/এইচএসএম/ডিসেম্বর ১৭, ২০১৩)