দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ‘দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুন করে সিডিউল ঘোষণা করা যেতে পারে’ উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘এখনও তফসিল বাতিল করা সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ করে আলোচনার ভিত্তিতে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের ফলাফল বাদ দিয়ে তফসিল বাতিল করা সম্ভব।’

গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৮ দলের ডাকা চতুর্থ দফা ৭২ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনের (মঙ্গলবার) সার্বিক চিত্র তুলে ধরার সময় তিনি এই মন্তব্য করেন।

ঢাকার রাজপথে আন্দোলন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘নেতাকর্মীদের কোথাও দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না, র‌্যাব-পুলিশ নির্বিচারে গুলি করছে। অবৈধ নিবার্চন, অসাংবিধানিক নির্বাচন জনগণই প্রতিহত করবে।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘সরকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের ফলাফল ঘোষণা করছে। মাঠে নির্বাচন না হলে সেই নির্বাচন ঠেকানো মুশকিল। তবে ৫ তারিখের নিবার্চন ঠিকই প্রতিহত করা হবে।’

চলমান সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চেয়েছি। ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে আমার রাজি ছিলাম। কিন্তু সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। পরবর্তীতে দুই দলের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সেখানে আমরা কিছু দাবি জানিয়েছি। দাবি মানলে তাদেরই (সরকার) পরবর্তী আলোচনার তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।’

যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার বিচার নিয়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরাও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। কিন্তু সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে না। তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করছে। যা কখনও এক হতে পারে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল করা হয়েছে কিন্তু বিচার আন্তজার্তিক মানের হচ্ছে না। এরপরও আদালত যে রায় দিয়েছে তাতে আমাদের বলার কিছুই নেই। পাকিস্তানে রায় নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে সে বিষয়ে সরকারকেই প্রতিবাদ জানাতে হবে। হত্যা, নির্যাতন চালিয়ে সরকার দেশের জনগণকে বিভক্ত করে ফেলেছে, দেশকে দুর্বল করে দিয়েছে। যে কারণে বিদেশিরা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সাহস দেখাচ্ছে।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি শাসক দলের ক্যাডারদের বিরোধী দলের আন্দোলন দমাতে মাঠে নামিয়েছে। তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে হামলা করছে।’

এছাড়া সরকার যৌথ বাহিনী নামিয়ে হিটলিস্ট তৈরি করে বিরোধী নেতা-কর্মীদের খুন করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

গত কয়েক দিনে লক্ষ্মীপুর, জয়পুরহাট, সাতক্ষীরা, নীলফামারী, নোয়াখালী, লালমনিরহাট ও যশোরে বিরোধী দলের ২৫ নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, যশোরের এক নেতাকে হাতুড়িপেটা করে হত্যা করা হয়েছে। গতরাতে বিএনপির সাবেক তথ্য সম্পাদক এহসানুল কবিরকে তার বাসা থেকে র‌্যাব গ্রেফতার করেছে। তিনি এখন কোথায় আছেন তা কেউ জানে না।

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পরও যৌথবাহিনী দিয়ে জেলায় জেলায় ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের হত্যা-গুম করার দায় নিতে হবে আপনাদের। সরকারের আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশনকে ভবিষ্যতে অবশ্যই এসব ঘটনার জন্য জবাবদিহী করতে হবে।’

সরকারের এই নির্বাচনকে ‘বানরের পিঠা ভাগের মতো সংসদীয় আসনগুলোকে নিজেদের মধ্যে ভাগা-ভাগি করা হয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘নয় কোটি ভোটারের মধ্যে ইতোমধ্যে ৫২ শতাংশ ভোটারকে ভোটদানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কারণ ভোট চাওয়ার মতো তাদের নৈতিক মনোবল আর অবশিষ্ট নিই। বাকি ১৪৬টি আসনেও তারা আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনে পিঠা ভাগা-ভাগি করার নির্লজ্জ কৌশল নিয়ে জনমতের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে।’

ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক শুনানির কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে দ্বিতীয় দফায় শুনানি হবে। ওই শুনানি হবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক।’ দেশের সকল নাগরিককে এই অসম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন।

‘দশম জাতীয় সংসদ নিয়ে আলোচনার আর কোন অবকাশ নেই- একাদশ সংসদের বিষয়ে সংলাপ হতে পারে।’ যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, তিনি সরকারের পক্ষ থেকে নাকি দলের পক্ষ থেকে; নাকি উভয়পক্ষ থেকে কিংবা শুধু নিজের পক্ষ থেকে এই বক্তব্য দিয়েছেন আমরা তা জানি না। তার বক্তব্যের সঙ্গে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রী বা নেতাদের বক্তব্যের কোন মিল নেই। এমন গড়মিল আর গোঁজামিল দিয়েই চলছে এই সরকার।

তিনি সরকার ও সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এমন বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমানে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আসাদুজ্জামান রিপন, সহ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করিম শাহীন প্রমুখ।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচ/এমএআর/নূরু/ডিসেম্বর ১৭, ২০১৩)